800)(Story_46)The missing leader.(নিখোঁজ নেতা।) _ Written by Junayed Ashrafur Rahman

800)(Story_46)The missing leader.(নিখোঁজ নেতা।)  _ Written by Junayed Ashrafur Rahman https://mywritingsjunayedmn1.blogspot.com/2019/12/about-me-junayed-ashrafur-rahman.html ✒ 


🌟 The video of how to translate my writings into your language. (আমার লেখাগুলো যেভাবে আপনার ভাষায় অনুবাদ করে পড়বেন,সেটার ভিডিও।) https://youtu.be/rsfots7Zf4Q?si=nmdFRZ_3kmCBzKne 🌟https://fb.watch/sdg6hGOW4A/?mibextid=Nif5oz


“একজন নেতা নিখোঁজ হলেন_তিনিকে আরজে চৌধুরী উদ্ধার করলো। কিন্তু সে সম্মুখীন হলো আন্তর্জাতিক ভয়াবহ এক চক্রের।”


🌟 এক. নিখোঁজ নেতার খবর ✒


সকাল বেলা আরজে চৌধুরী ইউটিউব চালু করে একটা খবর দেখলো।


সেই খবরের শিরোনাম,“গতকাল দুপুর থেকে বিএমবির নেতা কালাউদ্দিন খান চৌধুরী নিখোঁজ।”


সংবাদ পাঠক বলছেন,“গতকাল দুপুরের খাওয়ার পর বিএমবির নেতা কালাউদ্দিন একটু বিশ্রাম নিয়েছেন।এরপর তিনির স্ত্রীকে বলেছেন,তিনি এখন বিএমবির অফিসে যাচ্ছেন।এরপর থেকে তিনির কোন খোঁজখবর নাই।তিনির মোবাইল ফোনও বন্ধ আছে।তাই তিনির স্ত্রী বনানী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন।তাই কালাউদ্দিনকে খোঁজার জন্য বাংলাদেশের পুলিশ সক্রিয় হয়েছে।এবং জানা গিয়েছে যে,বিষয়টা জাতীয় সমস্যায় পরিণত হতে চলেছে। কেননা, সামনে সংসদ নির্বাচন।এরই মধ্যে বিএমবির মতো বড় দলের বড় নেতা নিখোঁজ হওয়াটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। তাই কালাউদ্দিনকে খোঁজার জন্য র‌্যাব,ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই_ও সক্রিয় হয়েছে।”


এরই মধ্যে আরজে চৌধুরীর বাড়ির একজন বলল,“কী ব্যাপার?সকালেই ইউটিউব দেখা শুরু করে দিয়েছো। ঘটনা কী?”


আরজে চৌধুরী বলল,“ঘটনা স্বাভাবিক।”


_ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই ইউটিউব চালানোকে স্বাভাবিক বলছো।


_ হ্যাঁ, আমার জন্যই স্বাভাবিক।


_ তোমার জন্য কীভাবে স্বাভাবিক হলো?


_ আমি এলএলবি পাস করেছি অনেক আগে। অনার্স মাস্টার্স পাস করেছি আরো আগে।এখন আমি কর্মজীবী মানুষ।তাই সকালে উঠে ইউটিউব অথবা ফেসবুক চালানো আমার জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার।


🌟 দুই. নতুন মামলা ✒


দুদিন পর আরজে চৌধুরী নিজের অফিসে বসে ফেসবুক চালাচ্ছিলো।


এমন সময় মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল,একটা অচেনা নাম্বার একটা ফোন এসেছে।


আরজে চৌধুরী রিসিভ করে বলল,“হ্যালো।”


অপর প্রান্ত থেকে একজন মহিলা বললেন,“তুমি কি আরজে চৌধুরী?”


_ জ্বি,আমি আরজে চৌধুরী।


_ তোমাকে আমি তুমি করে সম্বোধন করছি।তুমি আমার বয়সে অনেক ছোট হবে।তাই কিছু মনে করবে না।


_ না,কিছুই মনে করব না।


_ তুমি কি এই সংবাদটা শোনেছো যে, বিএমবির নেতা কালাউদ্দিন নিখোঁজ হয়েছেন?


_ অবশ্যই শোনেছি।এখনের ভাইরাল খবর তো এটাই।


_ আমি মৈতালী খান,কালাউদ্দিন সাহেবের স্ত্রী ।আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, আমার স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টা তুমি তদন্ত করো।


_ তাই? কিন্তু আপনার স্বামী কালাউদ্দিন সাহেবের নিখোঁজের বিষয়টা নিয়ে র‌্যাব_পুলিশে তদন্ত করছে।তো র‌্যাব_পুলিশের প্রতি কি আপনার বিশ্বাস শতভাগ আছে?


_ কিন্তু আমি চাই ব্যক্তিগতভাবে কেউ সেটার তদন্ত করুক।তাই তোমাকে আমি ফোন করেছি।


🌟 তিন. আরজে চৌধুরীকে হায়ার করা হলো ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“আচ্ছা। কিন্তু আমাকে দিয়ে তদন্ত করাতে হলে টাকা লাগবে।র‌্যাব_পুলিশে তদন্ত করে সরকারি খরচে। কিন্তু আমার তদন্তের খরচ আর আমার পারিশ্রমিক মক্কেলকেই বহন করতে হয়।”


_ সেটা আমি জেনেই ফোন করেছি।


_ আপনি আমার ব্যাপারে জানলেন কীভাবে?


একথা শোনে কালাউদ্দিন সাহেবের স্ত্রী বললেন,“ আমি যখন বললাম যে,‘ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত করাতে চাই।’


“তখন লন্ডনে অবস্থানরত আমাদের শীর্ষ নেতা স্কাইপের মাধ্যমে বললেন,‘আপনার স্বামী কালাউদ্দিন সাহেবের নিখোঁজের বিষয়টা তদন্ত করার জন্য আমি লন্ডন থেকে শার্লট ডোমস অথবা টেমস মন্ড অথবা বর্নডাইককে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছি।’


“তখন আরেকজন সিনিয়র নেতা বললেন,‘ তিনিদেরকে এখন পাঠানোর দরকার নাই। কেননা, বাংলাদেশেই একজন আছে তদন্ত করার জন্য।’


“একথা শোনে শীর্ষ নেতা বললেন,‘যার কথা আপনি বলেছেন,ওর কী যোগ্যতা আছে?কোন যোগ্যতায় লন্ডনের গোয়েন্দাদের পরিবর্তে সে তদন্ত করবে?’


“তখন সিনিয়র নেতা বললেন,‘অনেক যোগ্যতা আছে।সে অনার্স মাস্টার্স ও এলএলবি পাস,দুহাতে সমান তালে পিস্তল চালাতে পারে।ওর লাইসেন্স করা গ্লক নাইনটিন পিস্তল আছে, আর শটগান ও এসকেএস রাইফেলও আছে। এগুলো বহন করার জন্য সে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনেক টাকা প্রদান করে।আর এগুলোর সকল খরচ সে মক্কেলদের কাছ থেকে রোজগার করে।’


“একথা শোনে লন্ডন থেকে শীর্ষ নেতা বললেন,‘তাহলে প্রথমে তাকে দিয়েই তদন্ত করাও।না পারলে লন্ডন থেকে শার্লট ডোমস অথবা টেমস মন্ড অথবা বর্নডাইককে আমি বাংলাদেশে পাঠাবো।’


“এভাবেই তোমাকে আমি হায়ার করার জন্য ফোন করলাম।”


🌟 চার. মক্কেল সকলেই সমান ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“আচ্ছা, তাহলে আমাকে আপনি টাকা পেমেন্ট করুন বিকাশে,নগদে অথবা ডাচ_বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে।”


কালাউদ্দিন সাহেবের স্ত্রী মৈতালী খান  বললেন,“হ্যাঁ,অবশ্যই টাকা এখনই দিচ্ছি। কিন্তু তোমাকে আমার একটা উপরোধ, আমার স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টা তুমি কোন ধরনের রাজনৈতিক দল অথবা রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনা না করে তদন্ত করবে।”


আরজে চৌধুরী বলল,“অবশ্যই।আমার কাছে সকল মক্কেলই সমান।তিনি সরকারি দলের লোক হোন অথবা বিরোধী দলের লোকই হোন।”


একথা শোনে মৈতালী খান নগদের মাধ্যমে আরজে চৌধুরীকে টাকা পেমেন্ট করলেন।


🌟 পাঁচ. আরজে চৌধুরী ঢাকা শহরে উপস্থিত হলো ✒


পরদিন আরজে চৌধুরী মহাখালী গামী বাস থেকে নামল বনানীর কাকলীতে।


কাকলীর ওভার ব্রিজের কাছে নামল সে। গতকাল মৈতালী খান হোয়াটসএপে একটা মোবাইল নাম্বার দিয়েছিলেন।


সেই নাম্বারে আরজে চৌধুরী ফোন করল।তখন একটা মেয়ে ফোন রিসিভ করে বলল,“আপনি কি এসেছেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“হ্যাঁ,আমি এসেছি।আমি এখন কাকলী ওভার ব্রিজের নিচে আছি। মহাখালর দিকে বাম পাশে।”


মেয়েটা বলল,“আপনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।আমি আসছি।”


এরপর আরজে চৌধুরী অপেক্ষা করতে লাগল।প্রায় পাঁচ মিনিট পর মেয়েটা এসে উপস্থিত হলো।


🌟 ছয়. ঢাকা শহরের এসকর্ট ✒


আরজে চৌধুরীকে মেয়েটা বলল,“আপনি এখন আমার সাথে কালাউদ্দিন সাহেবের বাসায় চলুন।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আপনি কি কালাউদ্দিন সাহেবের দল বিএমবির সদস্য?”


মেয়েটা বলল,“না,আমি বিএমবির সদস্য না।আমি এসকর্ট।যে যখন আমাকে টাকা দেয়,আমি তখন ওর হয়েই কাজ করি।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আপনি কোন ধরনের কাজ করেন?”


মেয়েটা মুচকি হেসে বলল,“সকল ধরনের কাজই করি।”


🌟 সাত. কালাউদ্দিন সাহেবের বাসায় ✒


এরপর আরজে চৌধুরীকে নিয়ে মেয়েটা একটা রিকশায় উঠে চলে এলো কালাউদ্দিন সাহেবের বাসার সামনে।


আরজে চৌধুরী রিকশা ভাড়া দেয়ার পর মেয়েটা বলল,“আমার কাজ শেষ।আপনি এখন কালাউদ্দিন সাহেবের স্ত্রী মৈতালী ম্যাডামের সাথে গিয়ে কথা বলুন।”


একথা বলে মেয়েটা চলে গেলো। আরজে চৌধুরী এবার কালাউদ্দিন সাহেবের স্ত্রী মৈতালী খানকে ফোন করে বলল,“ম্যাডাম,আমি এখন আপনার বাসার সামনে এসেছি।”


ফোন‌ পেয়ে মৈতালী খান বাসা থেকে‌ বের হয়ে এলেন।এবার আরজে চৌধুরীর সামনে এসে মৈতালী খান বললেন,“আমার সাথে আসো।”


তাই মৈতালী খানের সঙ্গে আরজে চৌধুরী গিয়ে উপস্থিত হলো কালাউদ্দিন সাহেবের বাসার ভেতরে।


আরজে চৌধুরী বলল,“ম্যাডাম।আমাকে এখন আপনার বাড়ি তল্লাশি করতে হবে। কালাউদ্দিন সাহেবের নিখোঁজের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ক্লু বা কোন বিষয় পাওয়ার জন্য।”


মৈতালী খান বললেন,“অবশ্যই। তুমি তোমার মতো করে অনুসন্ধান করো।”


তাই আরজে চৌধুরী শুরু করলো কালাউদ্দিন সাহেবের বাসায় অনুসন্ধান।


🌟 আট. কালাউদ্দিনের সন্ধান ✒


প্রায় আধা ঘন্টা অনুসন্ধান করে আরজে চৌধুরী একটা খাম খুঁজে পেল।সেটা খুলে দেখল,তাতে একটা অফসেট কাগজ। মূলত সেটা একটা ই-মেইলের প্রিন্ট কপি।


ই-মেইলটা পড়ে আরজে চৌধুরীর মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।


ই-মেইলের প্রিন্ট কপিটা মৈতালী খানের কাছে নিয়ে আরজে চৌধুরী বলল,“আপনার স্বামী কোথায় আছেন,সেটার সন্ধান আমি পেয়েছি।”


মৈতালী খান বললেন,“কোথায় পেয়েছো?”


আরজে চৌধুরী বলল,“কালাউদ্দিন সাহেবের পুরাতন জুতোর ভেতরে।”


ই-মেইলের প্রিন্ট কপিটা হাতে নিয়ে মৈতালী খান পড়তে লাগলেন,


“কালাউদ্দিন সাহেব, আপনারা যেভাবে রাজনীতি করছেন,তাতে আগামী পঞ্চাশ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবেন না।যদি ক্ষমতায় যেতে চান তাহলে আমাদের সাথে যুক্ত হোন।আমরা আপনাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেব।যদি আমাদের সাথে যুক্ত হতে চান,তাহলে নিচের ঠিকানায় চলে আসুন।_ইতি সুবর্ণ রায়।”


এরপর মৈতালী খান ফিসফিস করে ঠিকানাটা পড়লেন।এরপর আরজে চৌধুরীর দিকে তাকালেন।


🌟 নয়. কালাউদ্দিনকে উদ্ধারের চুক্তি ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“ম্যাডাম,আমার কাজ শেষ।আমি আপনার স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টা তদন্ত করে দিয়েছি।”


মৈতালী খান বললেন,“হ্যাঁ, তোমার তদন্ত শেষ। কিন্তু আমার স্বামীকে তুমি উদ্ধার করে আনবে।এর জন্য তুমি কত টাকা চাও?”


আরজে চৌধুরী টাকার পরিমাণ বলল। মৈতালী খান বললেন,“এতো টাকা?”


আরজে চৌধুরী বলল,“ওই স্থান থেকে কালাউদ্দিন সাহেবকে উদ্ধার করে আনার জন্য এতো টাকাই লাগবে।”


মৈতালী খান একটু চিন্তা করে বললেন,“আচ্ছা,এতো টাকাই দেব। সমস্যা নাই।বিএমবি ক্ষমতায় গেলে এর চেয়ে বেশি টাকা আমি একদিনেই রোজগার করতে পারব।”


আরজে চৌধুরী অসম্মতির সুরে বলল,“সেটা আপনার ব্যাপার। কালাউদ্দিন সাহেবকে আমি উদ্ধার করে আনব।এর বিনিময়ে আমাকে আপনি অগ্ৰিম টাকা দিচ্ছেন। আপনি টাকা কোত্থেকে দিচ্ছেন আর কোত্থেকে রোজগার করবেন,সেটা কোন বিবেচ্য বিষয় না।”


এরপর মৈতালী খানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আরজে চৌধুরী কালাউদ্দিন সাহেবের বাসা থেকে বেরিয়ে এলো।


🌟 দশ. বাস টার্মিনালে ✒


কালাউদ্দিন সাহেবের বাসা থেকে বের হয়ে আরজে চৌধুরী একটা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠে চলে এলো বাস টার্মিনালে।


ভাড়া মিটিয়ে আরজে চৌধুরী গেলো টিকেট কাউন্টারে।


টিকেট মাস্টারকে আরজে চৌধুরী বলল,“আমি কলকাতায় যেতে চাই। পাসপোর্ট আছে। কিন্তু ভিসাটা কাল নিয়ে আসছি। টিকেটের মূল্য কত?”


টিকেট মাস্টার বললেন,“বর্তমানে ভারতে যেতে ভিসাও লাগে না_পাসপোর্টও লাগে না। শুধু বিমান অথবা ট্রেন অথবা বাসের টিকেট হলেই চলে‌।ওই টিকেটটাই ভিসা ও পাসপোর্টের বিকল্প হিসেবে কাজ করে (ফ্যান্টাসি)।”


আরজে চৌধুরী বলল,“তাহলে আমাকে আপনি কলকাতার একটা টিকেট দেন।”


🌟 এগারো. কলকাতার বাসে ✒


টিকিট কেটে আরজে চৌধুরী গিয়ে উঠলো বাসে।


আরজে চৌধুরীর সিট জানালার পাশে।সে গিয়ে সিটে বসে ইউটিউব দেখতে লাগলো। ইউটিউব খুলতেই দেখা গেলো দেশে চলমান অবরোধ, ভাঙচুর আর জ্বালানি পুড়ানি।


অন্যদিকে চলছে ওবায়দুল কাদের আর মির্জা ফখরুলের মতো শীর্ষ নেতাদের তর্কযুদ্ধ।


এমন সময় আরজে চৌধুরীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে বলল,“আপনার পাশের সিটটা আমার‌।আপনি জানালার দিকে আরেকটু সরে বসুন।”


আরজে চৌধুরী সরে গিয়ে বলল,“অবশ্যই। আমার পাশে তো এখনো কেউ বসে নি।তাই একটু এদিকে বসেছিলাম।”


মেয়েটা বসতে বসতে বলল,“আপনি কলকাতায় যাওয়ার পর কোথায় যাবেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আপাতত কলকাতাতেই যাচ্ছি।আপনি কোথায় যাবেন?”


মেয়েটা বলল,“আমিও কলকাতা যাচ্ছি। কলকাতার ফ্রি কলেজ স্ট্রিটে আমাদের বাড়ি আছে‌। সেই স্থানে আমার ভাই বোনেরা থাকে।আর ঢাকাতে আমার বাবা মায়ের সাথে আমি থাকি।বছরে ছয় সাত বার আমি কলকাতায় যাই।আমার নাম বিবা রায়। আপনার নাম কী?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমার নাম আরজে চৌধুরী।”


এরপর দুজনেই যে যার সিটে বসে রইলো।


🌟 বারো. বেনাপোল সীমান্তে ✒


যথা সময়ে বাস ছাড়লো। এরপর বাস উঠলো পদ্মা সেতুর উপরে।বিনা যানজটে অল্প সময়েই পদ্মা সেতু পেরিয়ে বাস চলতে লাগলো।


বাস চলতে চলতে রাত নেমে এলো।বাসের যাত্রীদের অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।আরজে চৌধুরী ইউটিউব চালাচ্ছে আর বিবা রায় চালাচ্ছে টিকটক।


এক সময় আরজে চৌধুরী আর বিবা রায়ও ঘুমিয়ে পড়ল।


ঘুম ভাঙলো বাসের স্টাফের ডাকে।স্টাফ বলছে,“আমরা এখন চলে এসেছি বেনাপোল স্থল বন্দরে। আপনাদের কারোর নাস্তা পানির দরকার হলে নামতে পারেন।আর এখন বাস চেক করা হবে।কেউ অবৈধ কোন কিছু এনেছেন কি না?সেটা চেক করার জন্য।”


একথা শোনে বাসের সকলেই নেমে নাস্তা পানি খেতে লাগল‌।


আর অন্যদিকে সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষীরা বাস চেক করতে লাগলো।অনেকক্ষণ চেক করে বলল,“ঠিক আছে।”


এরপর সকলেই বাসে উঠলেন।এরপর বাস চলতে শুরু করল।


🌟 তেরো. সীমানার ওপারে ✒


বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতের সীমায় প্রবেশের পর আবার চেকিং শুরু হলো।


কয়েকজন সীমান্তরক্ষী বাসের সামনে পিছনে যাওয়া আসা করে বলল,“ঠিক আছে,যাও।”


এরপর বাস চলতে লাগলো কলকাতার উদ্দেশে।


কলকাতায় পৌঁছানোর পর যে যার গন্তব্যে চলে গেলেন।আরজে চৌধুরীকে বিবা রায় বলল,“আপনি কোথায় থাকবেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“হোটেলে থাকব। এছাড়া কলকাতায় আমার থাকার কোন স্থান‌ নাই।”


বিবা রায় বলল,“আপনি যদি কিছু মনে না করেন,তাহলে কলকাতায় আমাদের বাড়িতেই উঠতে পারেন।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আপনাকে ধন্যবাদ।তবে আমি এসেছি একটা বিশেষ‌ কাজে।তাই আমাকে হোটেলেই থাকতে হবে।”


একথা শোনে বিবা রায় হতাশার সুরে বলল,“আচ্ছা।আমি আপনাকে জোরাজুরি করব না।”


একথা বলে বিবা রায় চলে গেলো।


আরজে চৌধুরীও চলল হোটেলের উদ্দেশে।


🌟 চোদ্দ. হোটেলে আরজে চৌধুরী ✒


হোটেলে গিয়ে আরজে চৌধুরী একটা এসি রুম ভাড়া করলো।তবে ম্যানেজারকে বলল,“আমাকে যদি চেক করতে চান, তাহলে এখনি করুন।পরে যদি বলেন, রুমের মধ্যে হেরোইন পাওয়া গিয়েছে_ইয়াবা পাওয়া গিয়েছে তাহলে চলবে না।”


তাই ম্যানেজার বাধ্য হয়েই আরজে চৌধুরীকে চেক করলেন।অবৈধ কোন কিছু না পেয়ে ম্যানেজার বললেন,“না, অবৈধ কিছুই পাই নি।”


এরপর আরজে চৌধুরী রুমে প্রবেশ‌ করলো।রুমে প্রবেশ করে শাওয়ার রুমে ঢুকে ভালো করে গোসল করলো।এরপর শরীরের কাপড় ভালো করে ধুয়ে শোকাতে দিলো।


এরপর নতুন জামা পরিধান করে ই-মেইলের প্রিন্ট কপিতে উল্লিখিত স্থানটা গুগল আর্থে দেখতে লাগলো।


গুগল আর্থ অনুযায়ী স্থানটা ফ্রি কলেজ স্ট্রিটের কাছেই।সেই স্থানে পুরনো বইয়ের বাজার আছে,যে রকম আছে বাংলাদেশের নীলক্ষেত আর বাংলাবাজারে।সেই কলেজ স্ট্রিটের পুরনো বইয়ের অল্প কিছু পরের স্থানটার কথা ই-মেইলের প্রিন্ট কপিতে উল্লিখিত হয়েছে।


🌟 পনেরো. উল্লিখিত স্থানে আরজে চৌধুরী ✒


হোটেল থেকে ফ্রেশ হয়ে আরজে চৌধুরী চললো উল্লিখিত স্থানে।


এমন সময় আরজে চৌধুরীর হোয়াটসঅ্যাপে মৈতালী খানের ম্যাসেজ এলো,‘আরজে চৌধুরী,কাজ কোন পর্যন্ত এগুলো?’


আরজে চৌধুরী রিপ্লাই দিলো,‘আমি এখন উল্লিখিত স্থানে যাচ্ছি।এরপর বাকি অবস্থা বলতে পারব।’


এরপর আরজে চৌধুরী উপস্থিত হলো সেই স্থানে।সেই স্থানে গিয়ে বাড়ির মালিককে জিজ্ঞেস করলো,“সুবর্ণ রায়ের সাথে আমি দেখা করতে এসেছি।”


বাড়ির মালিক বললেন,“সুবর্ণ রায় নামের কেউ এখানে থাকে না।”


আরজে চৌধুরী বলল,“কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে,সুবর্ণ রায় নামের একজন এখানেই থাকে।”


বাড়ির মালিক বললেন,“দেখুন,আমার বাড়িতে অনেক রকমের লোক বসবাস করে।কেউ ফ্যামিলিসহ দীর্ঘদিন বসবাস করছে।আবার কেউ গ্ৰামের বাড়িতে ফ্যামিলি রেখে আমার এখানে থাকে আর চাকরি করে। আবার কেউ আসে কয়েকদিনের জন্য, কেউ কয়েক মাসের জন্য।”


আরজে চৌধুরী বলল,“তাহলে বলুন,সাম্প্রতিক কোন কোন রুম থেকে ভাড়াটিয়া চলে গিয়েছে?”


বাড়ির মালিক বললেন,“দুটো রুমে আটজন লোক ছিলো।ওরা তিন দিন হলো চলে গিয়েছে।”


আরজে চৌধুরী বলল,“তাহলে ওদের রুমটাই আমাকে দেখান।”


🌟 ষোল. রুমে তল্লাশি ✒


আরজে চৌধুরীকে নিয়ে বাড়ির মালিক সেই দুটো রুমে উপস্থিত হলেন।আরজে চৌধুরী খুব ভালো করে রুম দুটো তল্লাশি করতে লাগলো।


রুমের মধ্যে এক ধরনের সুগন্ধীর উপস্থিটি টের পেয়ে বাড়ির মালিককে আরজে চৌধুরী জিজ্ঞেস করল,“যারা এখানে থাকতো,ওরা কী করতো?”


বাড়ির মালিক বললেন,“আমিও একবার ওদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,‘আপনারা কী করেন?’তখন তাদের একজন বলেছিলো,‘আঙ্কেল,আমরা আপনাকে নিয়মিত ভাড়া দিচ্ছি।আমরা আমাদের মতো থাকছি।তো আমরা কী করি?সেটা আমাদেরকে জিজ্ঞেস না করলেও তো হয়।’এরপর থেকে আমি আর ওদেরকে জিজ্ঞেস করি নি।”


আরজে চৌধুরী বলল,“ওদের সেটা জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন?”


বাড়ির মালিক বললেন,“ওরা কয়েকজন পালা করে বাইরে যেতো।আজ চারজন,তো কাল চারজন।বাইরে থাকতো কয়েকঘন্টা।এরপর চলে আসতো।সাথে নিয়ে আসতো বড় বড় মাছ,খাসির মাংস। বাজারের দামি দামি তরকারি।তাই আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওরা কী করে?আমি বাড়ির মালিক।আমার কোন ভাড়াটিয়াকে এতো বাজার সদাই করতে দেখিনি।একদিন তো আমাকে সুবর্ণ রায় রান্না করা একবাটি খাসির মাংস দিলো।আমি সেটা আমার ঘরে এনে পরোটা দিয়ে খাইলাম। এতো স্বাদ করে রান্না করা খাসির মাংস আমি কখনো খাইনি।তবে একটা লোককে সকল সময় ওরা নজরদারিতে রাখতো। রুমে থাকার সময়, বাথরুম ইউজ করার সময়সহ সকল সময় নজরদারিতে রাখতো। একদিন কথা বলে বুঝতে পারলাম,সে বাংলাদেশের লোক। কেননা,ওর কথা বলার ধরন ছিলো বাংলাদেশের লোকদের মতো।”


🌟 সতেরো. গোয়েন্দা বাসক ✒


এমন সময় দরজায় দাঁড়িয়ে একলোক বলল,“বিষয়টা আমার কাছেও খটকা লেগেছিলো।তাই আমি ওদের পিছু নিয়েছিলাম।বিষয়টা উদঘাটন করার আগেই ওরা কোথায় যেন পালিয়ে গেলো।”


লোকটাকে আরজে চৌধুরী জিজ্ঞেস করলো,“আপনি কে?”


লোকটা বলল,“আমি গোয়েন্দা বাসক। কলকাতার একজন শখের গোয়েন্দা।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আপনার নাম বাসক কেন?এতো নাম থাকতে বাসক?”


গোয়েন্দা বাসক বলল,“ছোটবেলা আমার সর্দিকাশি হয়েছিলো,তখন আমাকে বাসক পাতার রস খাওয়ানো হয়েছিলো।আমার সর্দিকাশি সেরে গিয়েছিলো।তখন ঠাকুমা আমার নাম রেখেছিলেন বাসক।আর এখন আমি শখের গোয়েন্দা বাসক।তো আপনি কে?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমি বাংলাদেশের প্রফেশনাল প্রাইভেট ডিটেকটিভ আরজে চৌধুরী। টাকার বিনিময়ে আমি তদন্ত করি।”


বাসক বলল,“আপনি বাংলাদেশের প্রাইভেট ডিটেকটিভ?তাহলে কি বাংলাদেশে ভাত না পেয়ে এখন কলকাতায় এসেছেন গোয়েন্দাগিরি করতে?এখানে ভাই সুবিধা করতে পারবেন না।সময় থাকতে কেটে পড়ুন।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমার মক্কেলের কাছ থেকে আমি টাকা গ্ৰহণ করেই কলকাতায় এসেছি তদন্ত করতে।তাই আপনি কোন টেনশন করবেন না যে,আপনার ব্যবসায় আমি লোকসান ঘটাবো।”


বাসক বলল,“বাংলাদেশের মক্কেলের কেস নিয়ে এখানে কোনদেরকে (কোন লোকদেরকে) আপনি খোঁজছেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“সেটা আপনাকে আমি কেন বলব? আমার তদন্তের বিষয় আমি আপনাকে বলব না।”


বাসক বলল,“কেন বলবেন না?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমি একজন প্রফেশনাল প্রাইভেট ডিটেকটিভ।তাই আমার তদন্তের বিষয় আমারই মতো আরেক প্রাইভেট ডিটেকটিভকে বললে প্রফেশনাল লোকসান হতে পারে।”


বাসক বলল,“তাই?আপনি এতোটা প্রফেশনাল?তাহলে ওদের ব্যাপারে আমি কী বুঝলাম,সেটা বলছি।”


বাসককে আরজে চৌধুরী থামিয়ে বলল,“সেটাও আমাকে বলতে হবে না।”


🌟 আঠারো. প্রফেশনাল আরজে চৌধুরী ✒


বাসক বলল,“কেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমি যেমন অন্যের কাজে কৃতিত্ব দাবি করি না,তেমনি আমার কাজে কারোর কৃতিত্বের ভাগ বসাতেও দেই না?”


গোয়েন্দা বাসক অনেকটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করল,“এরকমটা আপনি কেন করেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“প্রফেশনাল কারণেই আমি এরকম করি।”


গোয়েন্দা বাসক এবার রীতিমতো চমকিত হয়েই বলল,“প্রফেশনাল কারণেই আপনি এরকম করেন কেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“অন্যের কাজে কৃতিত্ব দাবি করলে আমার যোগ্যতার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাইবে।ফলে আমার মক্কেলও কমে যাইবে।আবার আমার কাজে অন্য লোককে কৃতিত্বের ভাগ বসানোর সুযোগ দিলে আমার টাকা থেকে তাকে টাকা দিতে হবে।তাই আমি অন্য কারোর কাজে কৃতিত্বের দাবি করি না এবং আমার কাজেও অন্যের কৃতিত্বের ভাগ বসানোর সুযোগ দিই না।”


এবার গোয়েন্দা বাসক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,“আপনি তো প্রফেশনাল প্রাইভেট ডিটেকটিভের সংজ্ঞাটাই বদলে দিলেন। এতোদিন প্রাইভেট ডিটেকটিভ চীরীটি রায়,মোমকেশ পক্সী, ব্রিগেডিয়ার হীমাদ্রি সরকার,ভেলুদা প্রমুখকে দেখে দেখে গোয়েন্দাগিরি করতাম।এখন আপনাকে দেখে প্রাইভেট ডিটেকটিভের প্রফেশনটা ঠিকমতো বুঝতে পারলাম।আচ্ছা, আপনি যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে গোয়েন্দাগিরি করছেন,তাতে কি আপনার কোন ভয় করছে না।”


আরজে চৌধুরী বলল,“মোটেই না।”


গোয়েন্দা বাসক বলল,“কেন ভয় করে না?”


আরজে চৌধুরী একথা শোনে প্যান্টের বেল্টের সাথে আটকানো গ্লক নাইনটিন পিস্তলটা বের করে গোয়েন্দা বাসককে দেখিয়ে বলল,“আমার সাথে পিস্তল আছে।তাই আমি ভয় করি না।”


গোয়েন্দা বাসক বলল,“আপনি আমাদেরকে পিস্তল দেখাচ্ছেন?এটা তো লুকিয়ে রাখার জিনিস।”


আরজে চৌধুরী বলল,“দেখানোর দরকার হলে তো দেখাবই।এটা কি আমার গোপনাঙ্গ যে,সকল সময় লুকিয়ে রাখতে হবে?”


গোয়েন্দা বাসক বলল,“আমি দাদা এতো কিছু বুঝি না।আমি আমার কাজে চললাম।”


একথা বলে গোয়েন্দা বাসক নিজের কাজে চলে গেল।


🌟 ঊনিশ. মৈতালী খানকে তথ্য প্রদান ✒


বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে আরজে চৌধুরী বুঝতে পারলো,কালাউদ্দিন খানকে এই বাড়িতেই আটকে রাখা হয়েছিলো।


তাই মৈতালী খানকে ফোন করে বলল,“ম্যাডাম, আপনার স্বামীকে যে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিলো,সেই বাড়িতে আমি এসেছি।যত দ্রুত সম্ভব আপনার স্বামীকে আমি উদ্ধার করে নিয়ে আসব।”


এরপর আরজে চৌধুরী ফোনে কথা বলা শেষ করে বাড়ির মালিককে বলল,“আমি যে কারণে এসেছিলাম,সেটা সম্পূর্ণ হয় নি।তবে আমাকে আরো কাজ করতে হবে।”


একথা বলে আরজে চৌধুরী হোটেলে ফিরে এলো।


হোটেলে এসে আরজে চৌধুরী এক মগ কফি খাইলো।এরপর অনেক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো।এরপর মুচকি হেসে ঘুমিয়ে পড়লো।


🌟 বিশ. নতুন করে অনুসন্ধান ✒


সন্ধ্যার পর আরজে চৌধুরী আরেকটা ঠিকানায় উপস্থিত হলো।


যে বাড়িটার সামনে আরজে চৌধুরী উপস্থিত হলো, সেই বাড়ির নেমপ্লেটে লেখা_ এডভোকেট ভঞ্জনকুমার রায়।এলএলবি,দায়রা আদালত।


বাড়ির কলিংবেল বাজানোর পর যে ব্যক্তি দরজা খুলল,তাকে দেখার জন্য আরজে চৌধুরী আগে থেকে ভাবে নি।


বিবা রায় দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে আরজে চৌধুরীর সামনে। আরজে চৌধুরীকে দেখে বিবা রায় চমকিত হয়ে বলল,“আরে আপনি?আপনি আমাদের বাসায় আসবেন,তো আমাকে আগে বললে পারতেন।”


আরজে চৌধুরী মুচকি হেসে বলল,“আমি তো আপনার সাথে দেখা করতে আসিনি।এসেছি ভঞ্জনবাবুর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য।”


আরজে চৌধুরীর কথা শোনে বিবা রায় বলল,“আচ্ছা,তাহলে আপনি এসেছেন আমার মেসো মশাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য? তাহলে আপনি ভেতরে আসুন।”


আরজে চৌধুরী ভেতরে ঢুকার পর বিবা রায় বলল,“এটা হচ্ছে আমার মেসো মশাইয়ের বাড়ির ড্রয়িং রুম ও বেড রুম দুটোই। আপনি বসুন,আমি মেসো মশাইকে ডেকে নিয়ে আসছি।”


🌟 একুশ. মেসো মশাইয়ের গোপন পরিচয় ✒


একটু পরে বিবা রায়ের সাথে অফিসে প্রবেশ করলেন ভঞ্জনবাবু, অর্থাৎ বিবা রায়ের মেসো মশাই।


আরজে চৌধুরীকে দেখে ভঞ্জনবাবু বললেন,“আপনি?আপনাকে তো আমি চিনিনা। আমার সাথে আপনার কী প্রয়োজন?আচ্ছা ঠিক আছে। আমি একজন উকিল। আমার কাছে সকলেই সমান।একজন সাধু পুরুষও আমার কাছে যেমন,একজন অপরাধীও আমার কাছে তেমন। একজন সতী নারীও আমার কাছে যেমন,একজন পতিতাও আমার কাছে তেমন।তো আপনি কোন প্রয়োজনে আমার কাছে এসেছেন?”


একথা শোনার পর আরজে চৌধুরী দাঁত বের না করেই একটা মুচকি হাসি দিলো।


এই হাসি দেখে ভঞ্জনবাবু মনে মনে বললেন,“আরে,এই হাসি তো আমার খুব চেনা।জুয়ার আসরে বড় বড় জুয়াড়ীরা যখন বিজয়ী হয়,তখন এরকম হাসিই দেয়। কিন্তু আমি তো এখন জুয়ার আসরে বসিনি।এবং এই ছেলেটাও তো কোন জুয়াড়ী বলে মনে হচ্ছে না।তবে সাবধানে এর সাথে আমাকে কথা বলতে হবে।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশের বিএমবির নেতা কালাউদ্দিন খান চৌধুরী নিখোঁজ হয়েছেন।তিনিকে উদ্ধার করার জন্য আমি ভারতে এসেছি।”


ভঞ্জনবাবু এবার একটা ঢোক গিলে বললেন,“তো আমার কাছে আপনি এসেছেন কেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“কেননা, কালাউদ্দিন খানের নিখোঁজের সাথে আপনি জড়িত।”


একথা শুনে ভঞ্জনবাবু আড় চোখে বিবা রায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,“বিবা,তুমি কি এই ছেলেকে কিছু বলেছো?”


বিবা রায় ভয়ে ভয়ে হাত জোড় করে বলল,“মেসো মশাই,মা কালীর দিব্যি।আরজে চৌধুরীকে আমি কিছুই বলিনি।”


ভঞ্জনবাবু এবার কিছুটা রাগের সুরে বললেন,“আপনি কীসব আবোল তাবোল বলছেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমি কোন আবোল তাবোল বলছি না মিস্টার সুবর্ণ রায়।”


এবার ভঞ্জনবাবু কিছুটা আঁতকে উঠে বললেন,“আমার গোপন পরিচয় কি আপনি জেনে ফেলেছেন?”


🌟 বাইশ. র এর বি টিম ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“হ্যাঁ, আপনার পরিচয় আমি জেনেছি।সুবর্ণ রায় নামটা আমি বাংলাদেশেই জেনে এসেছি।আর কোলকাতায় এসে জেনেছি,এডভোকেট ভঞ্জনকুমার রায়ই সুবর্ণ রায়।তাই এখন বলে দেন, কালাউদ্দিন খানকে আপনারা কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“হুঁ,আমিই সুবর্ণ রায়। ভারতের সিক্রেট সার্ভিস র এর বি টিম লিডার।আমরা সরাসরি র এর হয়ে কাজ করি না।র এর সদস্যদের মতো আমাদের কোন অফিসিয়াল পরিচয় ও বেতনভাতা নাই। আবার র এর সাপোর্ট আমরা পাই।আমরা কোন মিশনে সফল হলে,সেটার কৃতিত্ব নেয় র।আর র কোন মিশনে ব্যর্থ হলে সেটার দায় চাপিয়ে দেয় আমাদের উপর।মূলত ভারতের উগ্ৰপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী আর র এর মধ্যে আমরা মধ্যস্থতা ও সমন্বয় করি।”


আরজে চৌধুরী এবার মুচকি হেসে বলল,“এটা আপনাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।আমি এসেছি কালাউদ্দিন খানকে উদ্ধার করার জন্য। কালাউদ্দিন খানকে আমার কাছে দিয়ে দেন,তিনিকে নিয়ে আমি বাংলাদেশে চলে যাই।”


🌟 তেইশ. র এর এজেন্ট ও আরজে চৌধুরী ✒


আরজে চৌধুরীর কথা শোনে ভঞ্জনবাবু আর বিবা রায় চোখ বড় বড় করে একে অপরের দিকে তাকালেন।


এরপর আরজে চৌধুরীকে ভঞ্জনবাবু বললেন,“কালাউদ্দিন খানের ব্যাপারে আমি পরে বলছি‌। কিন্তু আপনি আমাদের বিষয়টাকে এমনভাবে বললেন,‘এটা আপনাদের অভ্যন্তরীন বিষয়।’ তাতে আমার মনে হলো,আপনার এ বিষয়ে আগে থেকেই অভিজ্ঞতা আছে।”


আরজে চৌধুরী এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,“হ্যাঁ,এ বিষয়ে আমার আগে থেকেই অভিজ্ঞতা আছে।তাই স্বাভাবিকভাবেই আমি বলেছি যে,এটা আপনাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“কী রকম অভিজ্ঞতা আপনার আছে।”


আরজে চৌধুরী এবার স্মৃতি চারণ করে বলতে লাগলো,


তখন আমি সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু তখনো হাফ প্যান্ট পরিধান করি।একদিন আমি আমার বড়ির সামনে বসে ছিলাম।এমন সময় অচেনা একলোক এসে বলল,‘দাদাবাবু, কিশোরগঞ্জের ভৈরব কতদূর?’


আমি বললাম,‘আপনি কি এখন ভৈরবে যেতে চাচ্ছেন?’


লোকটা বলল,‘আমি ভারতের ত্রিপুরাতে যেতে চাচ্ছি।ভৈরব থেকে আখাউড়া।এরপর ত্রিপুরার আগরতলায়।’


আমি বললাম,‘আপনি কি ভারতে ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন?’


লোকটা বলল,‘আমি ভারতেরই নাগরিক। বাংলাদেশে এসে আমার সাথে থাকা ভিসা, পাসপোর্ট ও টাকা সকল কিছুই হারিয়ে ফেলেছি।এখন চোরা পথে ভারতে যেতে চাচ্ছি।’


আমি বললাম,‘আপনি তো ভারতের নাগরিক।আপনার ভিসা, পাসপোর্ট ও টাকা হারিয়ে গিয়েছে,তাতে কী হয়েছে?আপনি তো চাইলেই বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারতে ফিরে যেতে পারেন। তাছাড়া বাংলাদেশ তো সকল সময়ই ভারতকে মেনে চলে।তাই এখন আপনাকে ভারতে চোরা পথে পালিয়ে যাওয়ার তো দরকার নাই।’


লোকটা বলল,‘হ্যাঁ, পালিয়ে যাওয়ার দরকার ছিলো না। কিন্তু আমি র এর এজেন্ট। পাসপোর্ট ভিসা হারানোর পর ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ফিরে যাওয়া নিরাপদ মনে হচ্ছে না।তাই চোরা পথে যেতে চাচ্ছি।’


আমার বয়সটা তখন খুবই কম ছিলো, কিন্তু ততোদিনে ভারতের র , ইউএসএর সিআইএ,এফবিআই, ইসরাইলের মোসাদ সম্পর্কে আমার জানা হয়ে গিয়েছে।তাই লোকটাকে আমি বললাম,‘বাংলাদেশে আপনাদের অনেক এজেন্ট আছে।ওদের সহযোগিতার মাধ্যমে তো আপনি ভারতে যেতে পারেন?’


লোকটা বলল,‘হ্যাঁ,পারি। আমাদের ভারতের র এর কোন এজেন্টকে গ্ৰেফতার করার সাহস বাংলাদেশে কারোর নাই। কিন্তু এখনের অবস্থা অন্য রকম। কেননা, বর্তমানে বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতায় আছে।তাতে আমাদের কোন সমস্যা ছিলো না। কিন্তু বিএনপির সাথে এখন জামায়াতে ইসলামিও ক্ষমতায় আছে।আর জামায়াতে ইসলামি হচ্ছে স্বাধীনতা ও ভারত বিরোধী পাকিস্তানপন্থী একটা দল। রাজাকার নেতা মতিউর রহমান নিজামী,আলী আহসান মুজাহিদ এখন বাংলাদেশের মন্ত্রী।এ কারণে, নয়া দিল্লির কেন্দ্রীয় র  আমাদেরকে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ,আসাম ও ত্রিপুরার র কে নির্দেশ দিয়েছে,আমরা যেন বাংলাদেশে এসে খোঁজখবর নিই। বাংলাদেশে ভারত বিরোধী কোন কার্যকলাপ শুরু হয়েছে কি না। তাই বাংলাদেশে আমরা কিছু ভারতীয় র এর এজেন্ট এসেছি খোঁজখবর নেয়ার জন্য।তবে এক্ষেত্রে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করেছি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি র এর এজেন্টদেরকে অর্থাৎ বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক র এর এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে সক্রিয় আছে,তাদেরকে আমরা বিষয়টা জানাই নি।যদি বাংলাদেশি র এর এজেন্টদেরকে আমরা বিষয়টা জানাই, তাহলে তাদেরকে বাংলাদেশের ডিজিএফআই টার্গেট করতে পারে।হ্যাঁ,ডিজিএফআইয়ের কোন সাহস নাই র এর বিরুদ্ধে লাগার। কিন্তু জোট সরকার ক্ষমতায় বসার পর ডিজিএফআই এখন খালেদা জিয়া আর তারেক জিয়ার হুকুমে চলছে‌।তাতেও আমাদের ভারতের কোন সমস্যা ছিলো না। কিন্তু আমরা জানতে এসেছি যে,জোট সরকার ও ডিজিএফআইয়ের কর্মকাণ্ড ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে চলছে কি না?তাই এতো কিছুর মধ্যে আমি আমার পরিচয় গোপন করে চোরা পথে ত্রিপুরা যেতে চাচ্ছি।’


তখন সামনে র এজেন্টকে উপস্থিত পেয়ে আমার মনের এ্যাডভেঞ্চার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।আর আমিও হয়ে উঠলাম নস্টালজিক কিশোর। কেননা ততোদিনে বাংলাদেশের লেখক ঘটক মনোয়ার হোসেনের ‘আসুদ ছানা সিরিজ’এর অনেকগুলো বই পড়ে ফেলেছি,এবং ইংল্যান্ডের মিয়ান ক্লেমিংয়ের ,‘টেমস মন্ড’ সিরিজও পড়ে ফেলেছি।তাই আমার নিজের অজান্তেই নিজেকে আসুদ ছানা আর টেমস মন্ড মনে হতে লাগল।সেই সাথে আসুদ ছানা সিরিজের,“হিন্দুস্তান নাট্যম“ উপন্যাসের কথাও মনে পড়ে গেলো। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম,আমি এই র এর এজেন্টকে ভারতে যেতে সহযোগিতা করবো।হ্যাঁ,অন্যদেশের স্পাইকে নিজ দেশের নাগরিক দ্বারা সহযোগিতা করা সমর্থিত না। কিন্তু ভারতের সরাসরি সহযোগিতায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীন হয়েছি।তাই ভারতের র এর ওই এজেন্টকে সহযোগিতা করাকে কখনই আমি বেআইনি মনে করিনি। তখনো বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে জেএমবি সক্রিয় হয়নি।তাই বাংলাদেশের যে কোন স্থানে যাওয়াতে কোন সমস্যা অথবা সতর্ক থাকার কোন দরকার ছিলো না।


র এর এজেন্টকে আমি বললাম,‘আমি আপনাকে ভারতে যেতে সহযোগিতা করবো।’


র (র এর এজেন্ট) বলল,‘আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নাই।’


আমি বললাম,‘আপনাকে আমি টাকা দেব। আপনি এখানে অপেক্ষা করুন।আমি বাসা থেকে টাকা নিয়ে আসছি।’


একথা বলে আমি বাসায় এসে হাফপ্যান্ট পাল্টে ফুলপ্যান্ট পরিধান করলাম।জমানো টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা ও কিছু ভাংতি টাকা নিলাম।


বর্তমান সময়ে বিশ্বের পরিস্থিতির কারণে টাকার দাম কমেছে আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।


কিন্তু তখন পাঁচ হাজার টাকার ছিলো অনেক দাম।তখন এক কেজি ইলিশ মাছের দাম ছিলো সত্তর টাকা,এক কেজি গরুর মাংস আশি টাকা,এক কেজি খাসির মাংস একশো দশ টাকা,এক কেজি আলুর দাম সাত টাকা,এক হালি ডিমের দাম বারো টাকা... প্রায় এরকম ছিলো দ্রব্য মূল্য।আমি এসে পাঁচ হাজার টাকা র এর এজেন্টের হাতে দিয়ে বললাম,‘দাদা,আমি আপনাকে এই পাঁ হাজার টাকা দিলাম।ভারতে গিয়ে রুপিয়া কিনবেন এবং খরচ করবেন।পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে র  বলল,‘দাদাবাবু,যদি কখনো সুযোগ পাই,তাহলে আপনার এই সহযোগিতার প্রতিদান আপনাকে আমি দেব।’


আমি বললাম,‘চলুন আমার সাথে।’


একথা বলে র এর এজেন্টকে সাথে নিয়ে চলে এলাম নান্দাইল বাসস্ট্যান্ডে।র কে সাথে নিয়ে আমি ময়মনসিংহ টু ভৈরবগামী একটা বাসে উঠলাম। নান্দাইল চৌরাস্তায় এসে আমার আর র এর ভাড়া পরিশোধ করে আমি বললাম,‘দাদা,আমি নেমে যাচ্ছি।ভৈরব পর্যন্ত আপনার ভাড়া আমি দিয়ে দিয়েছি।ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আরেকটা বাসে উঠে যেতে পারবেন।সেখান থেকে আখাউড়ার গাড়িতে উঠবেন।এরপর বর্ডার পেরিয়ে ভারতে চলে যেতে পারবেন।এরপর র এর হাতে আরো পাঁচশো টাকা দিয়ে আমি নেমে পড়লাম।


এরপর কেটে গেলো অনেক বছর।র আমাকে কী দিলো আর না দিলো,সেটা আমি চিন্তা করিনা। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করি যে,ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আদি ও অকৃত্রিম।”


একথা শোনে ভঞ্জনবাবু বললেন,“এভাবেই আপনার ওই অভিজ্ঞতা অর্থাৎ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অভিজ্ঞতা হলো।”


আরজে চৌধুরী বলল,“কিছুটা হয়েছিলো। কিন্তু পরে আরো হয়েছিলো।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“সেটা কী রকম?”


🌟 চব্বিশ. উলফা নেতা ও আরজে চৌধুরী ✒


ততক্ষণে তিন জনের জন্য বিবা রায় কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে।আরজে চৌধুরী কফিতে চুমুক দিয়ে বলতে লাগলো,“আমার আরো অভিজ্ঞতা হলো ভারতের আসামের উলফার এক নেতার সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার পর।সাক্ষাৎটা হয়েছিলো আকস্মিকভাবে।আমি তখন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। ততোদিনে বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান ও তাদের সহযোগিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গিয়েছে। সারাদেশে তখন জঙ্গিবাদের তেমন তৎপরতা নাই।আমিও ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষায় পাস করে ফুরফুরে মেজাজে আছি।তো একদিন কলেজ থেকে ক্লাস করে ফেরার সময় মনে জাগলো শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী ঘুরতে যাইব।তো যে ভাবনা,সেই কাজ।বাড়িতে যাওয়ার কিশোরগঞ্জের বাসে না উঠে,উঠলাম শেরপুরের বাসে।শেরপুর বাস টার্মিনাল থেকে একটা গারো ছেলেকে মোটরসাইকেলসহ ভাড়া করলাম। আমাকে সে ঝিনাইগাতী নিয়ে ঘুরে দেখাবে।তাই কথামতো আমাকে সে ঝিনাইগাতী নিয়ে গেলো।আমি একেবারে সীমান্তের পাশ দিয়ে হাঁটতে লাগলাম।


এমন সময় একলোক আমার কাছে এসে বলল,‘কী মামা,মেশিন লাগবে?’


দেশে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন চলছে। রাজনৈতিক নেতারা যে যার মতো আত্মগোপনে আছেন।আর এই লোক বলছে মেশিন লাগবে কি না?


আমি বললাম,‘কীসের মেশিন?আমি তো‌ ছাত্র মানুষ।আমার তো খাতা, কলম,ল্যাপটপ এগুলো ছাড়া অন্য কোন মেশিনের দরকার নাই‌।’


লোকটা বলল,‘তুমি ছাত্র বলেই তো তোমার মেশিন বেশি দরকার।’


আমি  বললাম,‘কীসের মেশিনের কথা বলছেন?’


লোকটা বলল,‘পিস্তল,এসকেএফ রাইফেল,একে ফোরটি সেভেন রাইফেল,একে ফিফটি সিক্স রাইফেল প্রভৃতি মেশিনের কথা বলছি।’


আমি বললাম,‘এগুলো দিয়ে আমি কী করবো?’


লোকটা বলল,‘এগুলো আমার কাছ থেকে কিনলে তোমার ক্ষমতা বাড়বে।তোমার কাছে যদি একটা একে ফোরটি সেভেন রাইফেল থাকে,তাহলে তোমার পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে।এবং একটা মাত্র পিস্তল নিয়ে কলেজে গেলে পুরো কলেজটাই তোমার কথামতো চলবে।অবশেষে একটা সময় তুমি বাংলাদেশের বড় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবে।এখন তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চলছে। রাজনৈতিক নেতারা যে যার মতো পালিয়ে আছে।তাই এখনই সময় আমার কাছ থেকে অস্ত্র কিনে নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার।বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানকে আমরা অস্ত্র সাপ্লাই দেয়ার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম,এরই মধ্যে ওরা গ্ৰেফতার হলো।তাই তাদের সাথে আমাদের অস্ত্র ব্যবসাটাও হলো না।আর এখন তো ওরাও নাই।তাই অতি সহজেই তুমি বাংলা ভাই আর শায়খ আব্দুর রহমানের পরিবর্তে জেএমবির নতুন নেতা হতে পারবে।’


আমি বললাম,‘আপনি কে? আপনারা এতো অস্ত্র কোথায় পান?’


লোকটা বলল,‘আমি উলফা নেতা স্বরূপ চেটিয়া।আমার বাড়ি ভারতের আসামের টিনসুখিয়া ডিসট্রিক্টে। আসামের প্রাদেশিক রাজধানী গোয়াহাটির মূল শহর দিসপুরেও আমার বাড়ি আছে।আমরা উলফা নেতা-কর্মীরা আসামকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্ৰাম করছি। কিন্তু আমাদের জীবন নির্বাহ করার জন্য মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আর বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করি।’


এরকম কথা বলে বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা এক ব্যাপার আর বাস্তবে অস্ত্র সাপ্লাই দেয়া আরেক ব্যাপার।বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে আমি বললাম,‘আঙ্কেল,আমার কোন অস্ত্রের দরকার নাই।আমি ছাত্র মানুষ।আমি লেখাপড়া করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই।’


কিন্তু আমার ততক্ষণে আমার শকড হওয়ার মতো একটা ব্যাপার ঘটে গেলো।আমার কথা শেষ হওয়া মাত্রই লোকটা শার্টের আড়াল থেকে একটা পিস্তল বের করে বলল,‘আচ্ছা,আপাতত এটা আমার কাছ থেকে কিনে তোমার কাছে রাখো।এটা সাথে নিয়ে তুমি কলেজে যাইবে, বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করবে।আর তুমি যখন বড় হবে,তখন আমাদের কাছ থেকে অস্ত্রের বড় বড় চালান কিনবে।’


আমি বললাম,‘না আঙ্কেল, সেটারও আমার কোন দরকার নাই।’


তখন লোকটা হতাশ ভাবেই বলল,‘তাহলে আমাকে একশো টাকা দাও।বিকালের নাস্তা করব।’


যে লোক হাতে পিস্তল নিয়ে একশো টাকা চাচ্ছে নাস্তা করার জন্য,তাকে তা দিয়ে দেয়াই ভালো।বরং না দিলে সেটা বিপদের কারণ হতে পারে।তাই তাকে একশো টাকা দিয়ে আমি চলে এলাম।


একদিকে র এর তৎপরতা আর এক দিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অপতৎপরতা _ তাই আমি এগুলোকে আপনাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবেই বিবেচনা করি।”


🌟 পঁচিশ. স্বাধীন মানুষ আরজে চৌধুরী ✒


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আপনি তো চাইলেই বাংলাদেশে অবস্থান করে ডাবল এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারতেন। যেহেতু আপনার বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। অর্থাৎ মেঘালয় ও আসামের কাছাকাছি,তাই  উলফার হয়ে কাজ করে বিশাল টাকার মালিক হতে পারতেন,আবার র এর এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে অনেক ক্ষমতার অধিকারী হতে পারতেন।”


আরজে চৌধুরী বলল,“হ্যাঁ,আপনার কথা ঠিক আছে। ময়মনসিংহ জেলা আসামের কাছাকাছি হওয়ার কারণে সিলেট জেলার পাশাপাশি ময়মনসিংহেও উলফার তৎপরতা রয়েছে। কিন্তু ট্যাকনিকেল কারণে আমি ওই দুটোর একটিতেও জড়াইনি।প্রথমত উলফার হয়ে কাজ করলে ভারতের সরকার ও বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে চলে যেতে হবে। আবার র এর হয়ে কাজ করলে আমার নিজের বলতে কিছুই থাকতো না। আমার ব্যক্তিগত সাফল্য ও অর্জনকেও র এর অবদান বলে স্বীকার করে নিতে হতো।তাই আমি ভারতের কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে সমর্থনও করি না এবং র এর এজেন্ট হিসেবেও কাজ করি না। অর্থাৎ আমি একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে আমার কাজ করি।এই যেমন টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একজন রাজনৈতিক নেতাকে উদ্ধার করার জন্য ভারতে এসেছি।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আচ্ছা,তাহলে এতো অভিজ্ঞতার কারণেই আপনি র এর পক্ষেও কাজ করেন না, উলফার পক্ষেও কাজ করেন না।তাহলে কি আপনি র এর বিরোধিতা করেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“না।আমি কখনই র এর বিরোধিতা করি না।আর বাংলাদেশে র অথবা ভারতের বিরোধিতা করা যে কথা,পানিতে অবস্থান করে কুমিরের বিরোধিতা করি একই কথা।এটা আমার কথা না,এটা দার্শনিক জুনায়েদ আশরাফুর রহমানের কথা।আমি একথার সাথে পুরোপুরি একমত। জুনায়েদ আশরাফুর রহমানের আগে আর কেউই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারে আর কেউই এতো সুস্পষ্টভাবে বলতে পারেন নি।”


একথা শোনে ভঞ্জনবাবু বললেন,“হুম।আমিও জুনায়েদ আশরাফুর রহমানের অনেক লেখা পড়েছি।উনার বিভিন্ন গল্প ও ছোট উপন্যাসে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজনীতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ সম্পর্কে যেভাবে লেখালেখি করেছেন,সেভাবেই কেউই লিখতে পারেন নি।”


🌟 ছাব্বিশ. ভঞ্জনবাবু যেভাবে এই পথে এলেন ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“আচ্ছা,আপনি তো একজন এডভোকেট মানুষ।তাহলে আপনি কেন র আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমন্বয়ক হলেন?”


ভঞ্জনবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,“সে অনেক কথা।আমি উকালতি পাশ করার আগে মনে করতাম উকালতি পেশাটা হচ্ছে অত্যন্ত পবিত্র একটা পেশা। কিন্তু উকালতি পাশ করার পর বুঝলাম,উকালতি যতটুকু না পবিত্র পেশা, এরচেয়ে বেশি বাটপাড়ি পেশা।


এরপরও উকালতি একটা শক্তিশালী পেশা।যে কোন রাজনৈতিক নেতা অথবা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে আটকে ফেলার জন্য উকালতি একটা মারাত্মক পেশা। আবার উকালতি পেশাটা হচ্ছে লাইসেন্স করা অস্ত্রের মতো।যেটা আপনার কাছে থাকলে কেউই আপনার ক্ষতি করতে পারবে না, কিন্তু আপনিও চাইলে কারোর প্রতি অবিচার করতে পারবেন না।


আইন সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করলাম, উকালতি পাশ করলাম,জেরা করার কলাকৌশল ভালো করে রপ্ত করলাম।এতো পড়াশোনা,এতো চর্চার পরও মামলা পাই না,মক্কেল পাই না।তাই প্রতারণা আর ব্ল্যাক মেইলিংয়ের কাজ শুরু করলাম।মামলা জিততে পারব না, নিশ্চিতভাবে জানার পরও মামলা জিতিয়ে দেয়ার কথা বলে মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নেয়া শুরু করলাম।আর অপরাধীদের কাছ থেকে ব্ল্যাক মেইলিংয়ের মাধ্যমে টাকা নেয়া শুরু করলাম যে,আমাকে টাকা না দিলে ওদের নামে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করব।


এবং উকালতি পেশার পাশাপাশি আরো কোন ধান্দাবাজি করা যায় কি না,সেটার চেষ্টাই করছিলাম।


এরই মধ্যে এক মক্কেল এলো খুনের মামলা নিয়ে।ওর এক বন্ধু খুন করার কারণে গ্ৰেফতার হয়েছে।সেই আসামির পক্ষেই আমাকে উকালতি করতে হবে।আমি মামলাটা সম্পর্কে জানার পর বুঝতে পারলাম,এ মামলা আমি কখনই জিততে পারব না।তা সত্ত্বেও বাটপাড়ি করে টাকা কামানোর জন্য মক্কেলকে বললাম,‘এ মামলা জিতে আপনার মক্কেলকে নির্দোষ প্রমাণ করে মুক্ত করা কোন ব্যাপারই না।’


আমার এ কথার ফাঁদে পতিত হয়ে মক্কেল বলল,‘আমি আপনাকে দিয়েই আমার মামলা চালাব।তো আপনি কত টাকা চান?’


আমি জানতাম, বাটপাড়ি করে যত টাকাই নিই,সেটাই আমার লাভ।তাই ধাপ্পা মেরে বললাম,‘বিশ লাখ টাকা দিতে হবে।’


মক্কেল বলল,‘আমি চাইলেই বিশ লাখ টাকা দিতে পারি। কিন্তু এখন দেব দশ লাখ টাকা,মামলা জিতার পর দেব দশ লাখ টাকা।’


মামলা তো জিততেই পারব না।তাই আগেই যত টাকা নিতে পারব,সেটাই আমার লাভ।তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও মামলাটা নিচ্ছি,এরকম ভাব করে বললাম,‘আচ্ছা,এখন আপাতত দশ লাখ টাকাই দেন।বাকি দশ লাখ টাকা কিন্তু মামলার পরপরই দিয়ে দিতে হবে।’


আমার বাটপাড়ি কথায় মুগ্ধ হয়ে আমাকে মক্কেল দশ লাখ টাকা দিয়ে দিলো।এরপর শুরু হলো আমার বাটপাড়ি।যে দিন আদালতে শুনানি হলো,সে দিনই আমি হেরে গেলাম। সেদিনই আদালতের বাইরে আমাকে মক্কেল জিজ্ঞেস করল,‘আপনি তো আদালতের শুনানিতেই টিকতে পারলেন না।এখন কী করবেন?’


আমি বললাম,‘এটা কোন ব্যাপারই না। আগামী সপ্তাহে হবে।’


কিন্তু আগামী সপ্তাহের পরের সপ্তাহেও হলো না।এভাবে কয়েক সপ্তাহ গেলো।এরই মধ্যে নতুন তদন্তে বেরিয়ে এলো,ওই খুনি আসামি কলকাতার লোক হলেও সে কাজ করে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে। কলকাতায় এক লোকের সাথে টাকা পয়সার ঝমেলার কারণে তাকে খুন করেছে।


এর কয়েক মাস পর লোকটার ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো।

একদিন আমার মক্কেল এসে বলল,‘আপনি তো মামলা জিততে পারলেন না। আমার মক্কেলেরও ফাঁসি হয়ে গেলো।এখন আমার টাকা ফেরত দেন।’


আমি তখন ধমকে উঠে বললাম,‘তোমার কত বড় সাহস।আমাকে দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীর মামলা চালাও।আর এখন এসে টাকা চাচ্ছো?ভালোয় ভালোয় এখান থেকে যাও।তা না হলে, পুলিশকে খবর দিয়ে এনে তোমাকে ধরিয়ে দেব।’এভাবে ভয় দেখিয়ে লোকটাকে তাড়িয়ে দিলাম।


আমি ভেবেছিলাম,লোকটা আর আসবে না। কিন্তু আমার ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে লোকটা একদিন সন্ধ্যার পর আমার এই অফিসে এসে আচমকা আমার গলায় ছুরি ধরলো।আমার গলাটা কেটে ফেলবেই,এমন সময় একলোক অফিসে প্রবেশ করে আমার মক্কেলকে গুলি করে মেরে ফেলল। পিস্তলে সাইলেন্সার থাকার কারণে তেমন কোন শব্দ হলো না।


আমি পিস্তলধারীকে জিজ্ঞেস করলাম,‘আপনি কে? আমার অফিসে কেন এসেছেন?আমার মক্কেলকে কেন গুলি করে মেরেছেন?’


আমর একথা শোনে আমাকে লোকটা ধমক দিয়ে বলল,‘রাখেন মিয়া আপনার জেরা।আপনাকে আমি বাঁচালাম,আর আপনিই আমাকে জেরা শুরু করেছেন।এখন আপনাকে আমি যেটা করতে বলছি,সেটা করুন। আসুন আমরা ধরাধরি করে লাশটা বাইরে ফেলে আসি।’


লোকটার কথামতো ধরাধরি করে লাশটা বাইরে ফেলে এলাম।


এবার লোকটা বলতে শুরু করলো,‘আমরা র এর বি টিম। অর্থাৎ র এর সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও আমরা র এর মতোই কাজ করি।আমাদেরকে র কোন টাকা পয়সা দেয় না। কিন্তু আমরা র এর বি টিম হিসেবে কাজ করে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারি।


খুনিকে ধরার পর আমরা ওঁৎ পেতে ছিলাম,ওর পক্ষে কারা মামলা চালায় সেটা জানার জন্য।


কয়েকদিন পরেই দেখলাম একটা লোক আপনার কাছে এসেছে।এরপর থেকেই আপনি আমাদের নজরদারিতে আছেন।আজ দেখলাম সে এসেছে।আমি দেখলাম আপনাকে সে খুন করার জন্য গলায় ছুরি ধরেছে।তাই তাকে আমি গুলি করে হত্যা করলাম।এখন আপনার সামনে দুটো পথ খোলা আছে।হয় আমার সাথে র এর বি টিম এ যোগ দেন,না হয় আমার হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরেন।’


একথা শোনে আমি টেনশনে পতিত হলাম।আমাকে এই লোক খুন হওয়া থেকে উদ্ধার করেছে, আবার আমিও নতুন ধান্দাবাজির সন্ধান করছিলাম।তাই ভেবেচিন্তে এই লোকের মাধ্যমেই র এর বি টিম এ যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।”


🌟 সাতাশ. ভঞ্জনবাবুর মারাত্মক মিশন ✒


ভঞ্জনবাবু একটু চোপ থেকে আবার বলতে শুরু করলেন,“কিন্তু র এর বি টিম এ যোগ দেয়ার পর আমার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হলো। পরবর্তীতে আমার মধ্যে দলীয় সংকীর্ণতা, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল, রাজনীতিকে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ইউজ করা প্রভৃতির প্রবণতা তেমন কাজ করছিলো না।কেননা, ততোদিনে আমার মনে জাতীয়তাবাদ তুঙ্গ অবস্থায় চলে গিয়েছে।ভারতের এমএলএ অথবা মন্ত্রী হওয়ার কামনা বাসনা আমার মন থেকে চলে গিয়েছে।এখন আমার মনে একটাই কামনা,সেটা হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশকে একত্রিত করা।”


🌟 আঠাশ. দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ ও উগ্ৰবাদ ✒


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আপনার মধ্যে কি দেশপ্রেম নাই ? আপনি কি জাতীয়তাবাদ সমর্থন করেন না ? আপনি কি চান না,ভারত ও বাংলাদেশ এক হয়ে যাক ?আপনি কি রাষ্ট্র ক্ষমতা চান না ?”


আরজে চৌধুরী বলল,“দেশপ্রেম বেশিও ভালো না, আবার না থাকাও ভালো না।দেশপ্রেম বেশি হলে রাজনৈতিক নেতারা শত্রুতে পরিণত হন। কেননা,তখন রাজনৈতিক নেতারা এটা মনে করে হিংসা করেন যে,‘অমুক তো দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে আমার চেয়ে বড় নেতা হয়ে যাচ্ছে।’ আবার দেশপ্রেম না থাকলে অরিজিনাল দেশপ্রেমিকরাও শত্রুতে পরিণত হন। কেননা,তখন অরিজিনাল দেশপ্রেমিকরা মনে করেন,‘অমুকের মধ্যে দেশপ্রেম নাই।অমুক তাহলে দেশের শত্রু।’ তাই দেশপ্রেমকে ভারসাম্যের মধ্যে রাখাটাই ভালো। অর্থাৎ কমও না,বেশিও না।আর জাতীয়তাবাদও ভালো। কিন্তু সেটা যখন অন্যদেশকে দখলের প্ররোচনা দেয়, আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে অপরাধ বৃদ্ধি করে এবং অশান্তি সৃষ্টি করে তখন সেটা জাতীয়তাবাদের নামে উগ্ৰবাদকে উস্কে দেয়।এরই ফলশ্রুতিতে শুরু হয় বিচ্ছিন্নতাবাদের।আর বিচ্ছিন্নতাবাদ কখনই নিজের দেশ অথবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো ফল বহন করে না।বিচ্ছন্নতাবাদকে নিরুৎসাহিত করে জুনায়েদ আশরাফুর রহমান অনেক আগে থেকেই লিখছেন।আমি সেগুলো পড়েছি।আর রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য আমার তাড়াও নাই,দরকারও নাই।আমার বাপ অথবা দাদা কেউই বাংলাদেশের এমপি অথবা মন্ত্রী ছিলেন না।তাই এখন এখন রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য আমার কোন তাড়া নাই।আর ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন নির্দলীয় জনগণ।আমি বৈধ পেশার মাধ্যমে আমার জীবিকা নির্বাহ করি।তাই যে কোনভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার ইচ্ছাও আমার নাই।”


ভঞ্জনবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,“অথচ কালাউদ্দিন সাহেবকে অনলাইনে আমি বললাম,‘আপনারা অনেক বছর যাবৎ রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত।আপনি যদি আমার কথামতো কাজ করেন,তাহলে আমরা আপনাদেরকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাব।আর অমনি তিনি রাজি হয়ে গেলেন।আর চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এলেন।অথচ আপনি চাচ্ছেন না যে, ভারত বাংলাদেশ এক হয়ে যাক।মূলত আপনি কেন,যিনিরা বাংলাদেশের ক্ষমতায় আছেন,তিনিদের অনেকেই চান না যে,ভারত ও বাংলাদেশ এক হয়ে যাক। কেননা,ভারত ও বাংলাদেশ এক হয়ে গেলে তিনিরা পরবর্তীতে বাংলাদেশের হর্তা কর্তা হয়ে দেশ চালাতে পারবেন না।তখন ভারতের একটা প্রদেশের নেতা হিসেবে থাকতে হবে। কিন্তু তিনিরাও জানেন যে, বাংলাদেশে অবস্থান করে ভারতের বিরোধিতার মাধ্যমে সাময়িক রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা সম্ভব, কিন্তু ক্ষমতায় থাকা অসম্ভব।”


আরজে চৌধুরী বলল,“তাহলে তো হলোই।যিনিরা বাংলাদেশের ক্ষমতায় আছেন,তিনিরা আপনাদের বিরোধিতা করছেন না। আপনারা আর কি চান ?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আমরা চাই ভারত ও বাংলাদেশ এক হয়ে যাক।আমাদের কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নাই। এমনকি আমাদের নিজেদের জীবনেরও কোন উদ্দেশ্য নাই।এখন আমাদের উদ্দেশ্য একটাই,ভারত ও বাংলাদেশকে একত্রিত করণ।”


🌟 ঊনত্রিশ. বিলম্ব করছেন কেন? ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“আপনারা যদি এতোই তৎপর হয়ে থাকেন,তাহলে ভারত ও বাংলাদেশকে এখনো একত্রিত করছেন না কেন?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“জনবহুল একটা দেশ দখল করা এতো সহজ না। আবার কেন্দ্রীয়ভাবে সরাসরি আক্রমণের মাধ্যমে দখল করা খুবই সহজ।নয়া দিল্লি চাইলে,অর্থাৎ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে বাংলাদেশকে অতি সহজেই দখল করে নিতে পারবে। একাত্তরের যুদ্ধে যেভাবে পাকিস্তানকে ভারত মাত্র নয়দিনে পরাজিত করেছিলো,তেমনি আরো কম সময়ে বাংলাদেশকে ভারত পরাজিত করে দখল করে নিতে পারবে। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সেটা করতে চাচ্ছে না।”


আরজে চৌধুরী বলল,“ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কেন সরাসরি বাংলাদেশ দখল করতে চায় না ? ভারতের সরকার কি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ভয় পায়?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ভারতের সরকার কখনই ভয় পায় না। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীসহ সকল বাহিনীও যদি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে,তাহলেও বাংলাদেশকে ভারত অল্প সময়েই দখল করে নিতে পারবে।”


আরজে চৌধুরী বলল,“এরকমই যদি হয়,তাহলে বাংলাদেশ দখল না করে  আপনারা কেন এখনো গুপ্তচরবৃত্তি করছেন?”


🌟 ত্রিশ. বিশ্ব পরিস্থিতির অপেক্ষায় ✒


ভঞ্জনবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,“আমরা কি ফ্যান্টাসিতে ভোগে ছেলেমানুষী করে গুপ্তচরবৃত্তি করছি?মোটেই না।বরং আমরা বিশ্বের পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছি।বর্তমান সময় হচ্ছে গ্লোবালাইজেশনের যুগ।তাই একদেশ চাইলেই আরেক দেশকে দখল করে নিতে পারে না।তেমনি আমরা চাইলেই বাংলাদেশকে দখল করে নিতে পারি। কিন্তু আমাদের পাশের শক্তিশালী দেশ চীন, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের সাথে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও রাশিয়ার সাথেও আমাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।তাই আমরা এখন বিশ্বের পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছি।চীন যদি তাইওয়ান দখল করে নেয়,তাহলে আমরাও এ পরিস্থিতির সুযোগে বাংলাদেশ দখল করে নেব।”


আরজে চৌধুরী বলল,“এতোই সহজ?আপনারা যদি বাংলাদেশ দখল করতে চান,তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“তাতো তুলবেই। কিন্তু মনে রাখবেন, তাইওয়ান দখল করা চীনের জন্য যতটুকু কঠিন, ভারতের জন্য বাংলাদেশ দখল করা ততোটাই সহজ।”


🌟 একত্রিশ. দায়ভার ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“এতো বড় কাজ আপনারা র এর বি টিম হিসেবে করতে পারবেন? আপনারা ভারতের সরকার ও র এর কাছ থেকে এরকম কী সুবিধা পাচ্ছেন,যেটার ভরসায় বাংলাদেশ দখল করে নিতে চাচ্ছেন?আর আপনারা ব্যর্থ হলে এর দায়ভার নেবে কে?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“তেমন কোন সুবিধা আমরা পাই না।তবে যতটুকু পাই, ততটুকু আমাদের মতো বি টিমের জন্য যথেষ্ট।এবং ভারত ও বাংলাদেশকে একত্রিত করতে পারলে এই সাফল্যের ক্রেডিট পাবেন ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিগণ।আর ব্যার্থ হলে এর দায়ভার চাপবে আমাদের উপর।এবং আমরা যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নেব।”


🌟 বত্রিশ. কীভাবে আমার (সুবর্ণ রায়=ভঞ্জনকুমার) সন্ধান পেলেন ? ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“শোনলাম আপনাদের পরিকল্পনা। আপনাদের পরিকল্পনা মতো আমাদের চললে সুবিধা হবে না। এরচেয়ে বরং কালাউদ্দিন সাহেবকে আমার সাথে দিয়ে দেন। কালাউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে আমি বাংলাদেশে চলে যাই।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আচ্ছা,সেটা পরে দেখবো।তো এখন বলেন,আপনি আমার সন্ধান কীভাবে পেলেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমি ওই বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করার সময় আপনার ভিজিটিং কার্ড পেয়েছিলাম। ভিজিটিং কার্ড পেয়েই আপনার কাছে এলাম।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“পেশাগত কারণে ভিজিটিং কার্ড সবসময় আমার সাথেই রাখি।কখন যে ভুল করে আমার একটা ভিজিটিং কার্ড ওই বাড়িতে রেখে এলাম,বুঝতেই পারলাম না।”


🌟 তেত্রিশ. কালাউদ্দিন সাহেবকে দিয়ে দেন ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“আপনারা ভারত ও বাংলাদেশকে একত্রিত করবেন কি না,সেটা আপনাদের ব্যাপার।আমি এসেছি কালাউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে যেতে।আমার সাথে কালাউদ্দিন সাহেবকে দিয়ে দেন।”


ভঞ্জনবাবু পরিহাস করে বললেন,“এটা কি মামা বাড়ির আবদার ? আপনি চাইলেন আর অমনি আপনার সাথে কালাউদ্দিন সাহেবকে দিয়ে দেব?”


একথা শোনে ভঞ্জনবাবুকে আরজে চৌধুরী পিস্তল দেখিয়ে বলল,“যদি কালাউদ্দিন সাহেবকে আমার সাথে যেতে না দেন,তা হলে আপনাকে আমি গুলি করে হত্যা করব।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ। আমিও একজন শিক্ষিত মানুষ।তাই আপনি যুক্তি দিয়ে কথা বলুন।পিস্তল বের করেছেন কেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“শরীরের শক্তি প্রদর্শন করে যে বৈধ কাজ এক মিনিটে করা সম্ভব,সেটার জন্য সাতদিন যুক্তি দিয়ে বুঝানোর দরকার নাই।আবার পিস্তল দেখিয়ে যে বৈধ কাজ এক ঘন্টায় করা সম্ভব,সেটার জন্য কেউকে একমাস তেল মারারও কোন‌ দরকার নাই।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আপনি কি পেশী শক্তির কথা বলছেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“অবশ্যই।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“পেশী শক্তি প্রদর্শন করে কার্য উদ্ধার করে অসভ্য ও ইতর প্রকৃতির মানুষে।”


আরজে চৌধুরী বলল,“হ্যাঁ, আপনার কথা সত্য। কিন্তু সেটা অন্যায় ও অবৈধ কাজে প্রযোজ্য হতে পারে।আমি বৈধ ও ন্যায় কাজে পেশী শক্তির কথা বলেছি।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আচ্ছা,তাই?তো আপনার পেশী শক্তি কতদিন থাকবে?আপনার শরীরের এই শক্তি কি সারাজীবন ধরে রাখতে পারবেন?তখন কী করবেন?”


আরজে চৌধুরী মুচকি মুচকি হেসে বলল,“এখন আমার যৌবন ও শরীরের শক্তি আছে।তাই আমি আমার পেশী‌ শক্তি বৈধ কাজে প্রয়োগ করব। কিন্তু যখন এরকম অবস্থা থাকবে না,তখন পেশী শক্তির প্রদর্শন করব না।এখন ভালোয় ভালোয় কালাউদ্দিন সাহেবকে আমার সাথে দিয়ে দেন।তা না হলে আমি আপনাকে গুলি করব।”


🌟 চৌত্রিশ. কালাউদ্দিন কোথায় আছেন ? ✒


ভঞ্জনবাবু বুঝতে পারলেন,আরজে চৌধুরীর সাথে তাল বাহানা চলবে না।তাই তিনি বাধ্য হয়েই বললেন,“কালাউদ্দিন সাহেব আমাদের হেফাজতেই আছেন।তবে কৌশলগত কারণে আমরা তিনিকে সরিয়ে নিয়েছি।”


আরজে চৌধুরী বলল,“সরিয়ে কোথায় রেখেছেন?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“কালাউদ্দিন সাহেবকে আমরা সরিয়ে রেখেছি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের একটা বাড়িতে।”


আরজে চৌধুরী বলল,“হঠাৎ করে সরিয়ে রাখার প্রয়োজন হলো কেন?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“কালাউদ্দিন সাহেবের স্ত্রী মৈতালী খান যখন আপনাকে হায়ার করলেন,তখনই আমরা খবর পেয়েছিলাম।”


আরজে চৌধুরী বলল,“তাহলে কি আপনারা সেটা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে জেনেছিলেন?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“না,সেটা আমরা জেনেছি বাংলাদেশে অবস্থানরত র এর বাংলাদেশি বি টিমের মাধ্যমে।”


আরজে চৌধুরী বলল,“বাংলাদেশেও কি আপনাদের র এর বি টিম আছে?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“অবশ্যই আছে। বাংলাদেশে র এর বাংলাদেশি এজেন্ট আছে,তেমনি বাংলাদেশে র এর বাংলাদেশি বি টিম আছে।”


আরজে চৌধুরী বলল,“ওরা কারা?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“যারা ইতোমধ্যে বুঝে গিয়েছে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা এখন পরিবারতন্ত্রের উপর নির্ভর করছে, পরিবারতন্ত্রের বাইরে কোনভাবেই ক্ষমতায় অসম্ভব,ওরাই এখন র এর এজেন্ট ও বি টিম হিসেবে কাজ করছে। অর্থাৎ,ওরা যেমন নিজেরা ক্ষমতায় যেতে পারবে না,তেমনি কেউকে পরিবারতন্ত্রের উপর নির্ভর করে ক্ষমতা অর্জন করতেও দেবে না।”


আরজে চৌধুরী বলল,“রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। পরিবারতন্ত্র বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই আছে।এমনকি আপনাদের ভারতেও আছে। তাহলে ওরা কেন বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্রকে বিকশিত হতে দেবে না।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“এটা একটা সেন্টিমেন্ট।ক্ষমতায় যেতে না পেরে বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্র বিরোধী একটা সেন্টিমেন্ট গড়ে উঠেছে।আমরা সেই সেন্টিমেন্টকেই কাজে লাগাচ্ছি।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আপনারা চাচ্ছেন ভারত ও বাংলাদেশকে একত্রিত করতে।কিন্তু সেটার সাথে পরিবারতন্ত্রের কী সম্পর্ক?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আপনি খুবই সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছেন।যারা পরিবারতন্ত্রের উপর নির্ভর করে ক্ষমতা ভোগ করছে,ওরা কেউই চাইবে না ভারত ও বাংলাদেশ এক হয়ে যাক।যেমন:- তারেক জিয়া।তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে ছিলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি।সম্ভবত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়া সকল মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ তিনিই করতেন। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশ যদি এক হয়ে যায়,তাহলে তারেক জিয়া কখনই চাইবেন না যে,ভারত ও বাংলাদেশ এক হয়ে যাক।”


আরজে চৌধুরী বলল,“তারেক যদি না চান যে,ভারত ও বাংলাদেশ এক হয়ে যাক,তাহলে কালাউদ্দিন সাহেবকে কেন বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসতে বলেছেন?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“প্রথমে তো কালাউদ্দিন সাহেব মনে করেছিলেন যে,আমরা তিনিদেরকে সহজেই ক্ষমতায় বসিয়ে দেব। কিন্তু যখন কালাউদ্দিন সাহেব জানলেন যে,ভারত ও বাংলাদেশকে এক করার কাজে সহযোগিতা করলে তাদেরকে আমরা ক্ষমতায় বসাবো, তখন আমাদেরকে সহযোগিতা করতে তিনি অস্বীকার করলেন।যদিও তাকে আমরা বলেছি যে,‘বিএনপিতে যে রকম পরিবারতন্ত্র আছে,তেমন পরিবারতন্ত্র তো বিএমবিতে নাই।’ তখন কালাউদ্দিন সাহেব বললেন,‘বিএনপির মতো বিএমবিতেও আমরা পরিবারতন্ত্র গড়ে তুলবো।তাই আমরা কখনই ভারত ও বাংলাদেশকে এক হতে দেব না।’ এরপর থেকেই কালাউদ্দিন সাহেবকে আমরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের একটা বাড়িতে বন্দি করে রেখেছি।”


আরজে চৌধুরী তখন বলল,“তাহলে কি কালাউদ্দিন সাহেবকে আমার সাথে দিয়ে দিচ্ছেন না?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“না দিলে আপনি কী করতে পারবেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“রাষ্ট্রীওভাবে কিছু করতে না পারলেও আপনাকে আমি গুলি করে মেরে ফেলতে পারব।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আপনি কি মনে করেছেন,বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে আপনি খুন করবেন,আর ভারতের পুলিশ প্রশাসন বসে থাকবে?”


আরজে চৌধুরী বলল,“বাংলাদেশ থেকে একজনকে কনফিউজড করে ভারতে এনে আটকে রেখেছেন। এক্ষেত্রেও তো ভারতের পুলিশ প্রশাসন বসে আছে।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“বসে নাই।বরং ভারতের পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারটা জানেও না।”


আরজে চৌধুরী বলল,“তেমনি আপনাকেও গুলি করে মেরে ফেললেও ভারতের পুলিশ প্রশাসন জানবে না।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আপনি কি যুক্তিতর্ক মানেন না?”


আরজে চৌধুরী বলল,“ভালো কাজে এসে হাতে পিস্তল রেখে যুক্তিতর্ক করা আমার অপছন্দের ব্যাপার।তাই ভালোয় ভালোয় কালাউদ্দিন সাহেবকে আমার সাথে দিয়ে দেন।”



🌟 পঁয়ত্রিশ. গোয়েন্দা বাসকের নজরদারি ✒


এমন সময় সাথে একটা মেয়েকে নিয়ে গোয়েন্দা বাসক অফিসে প্রবেশ করে বলল,“কলকাতার বাটপাড় আর বাংলাদেশের গোয়েন্দা একত্রে বসে কী হচ্ছে?”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“তুমি উকালতি সম্পর্কে এ রকম কথা বলতে পারেন না।”


গোয়েন্দা বাসক বলল,“আপনারা আদালতে মামলা জিতিয়ে দেয়ার কথা বলে যে সকল কাজ করেন,তাতে ওই কথাগুলোই প্রযোজ্য।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“তুমি কে? আমার অফিসে এসে তুমি কেন অশালীন কথা বলছো?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আপনি আমার পিছু পিছু ভঞ্জনবাবুর অফিসে এলেন কেন?”


গোয়েন্দা বাসক বলল,“পতিতালয়ের মেয়েদের কাছ থেকে কুমারীত্ব আশা করা যে রকম ভুল, তেমনি আদালতের উকিলের কাছ থেকে সততা আশা করা ভুল।আর ভঞ্জনবাবুও একজন উকিল।তাই আমি যখন দেখলাম আপনি ভঞ্জনবাবুর অফিসে এলেন,তখন বুঝলাম নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা আছে।তাই আমার বান্ধবী লাবণী মজুমদারকে সাথে নিয়ে এলাম।”


মেয়েটার উদ্দেশে ভঞ্জনবাবু বললেন,“তোমাকে বাসক বলল,আর অমনি তুমি ওর সাথে চলে এলে?তোমার কি কোন লজ্জা নাই?”


বাসকের সাথে আগত মেয়েটা বলল,“কীসের লজ্জা?বরং আমি একজন অমায়িক মেয়ে।আমি এতো অমায়িক এই কারণে যে,কলকাতা পুলিশের কনস্টেবলের চাকরিটা না পেলে আমাকে আমার পুরনো ঠিকানা সোনাগাছিতেই  থাকতে হতো।তাই পুলিশ হওয়া সত্ত্বেও আমার অতীত আমি ভুলিনি।আর ভুলিনি বলেই আমি এতো অমায়িক।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আচ্ছা বাসক বাবু, আপনি আমার পিছু নিলেন কেন?”


গোয়েন্দা বাসক বলল,“সরকারি গোয়েন্দাদের তৎপরতা বৃদ্ধির কারণে এখন আগের মতো মানুষে টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট ডিটেক্টিভদের মাধ্যমে কাজ করায় না।তাই বর্তমানে আমি কোথাও সমস্যা থাকলেও সমস্যা খুঁজে বেড়াই।কোথাও গোয়েন্দাগিরি করার সুযোগ না থাকলেও সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করি।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“এর চেয়ে আমাদের সাথে তুমি কাজ করা শুরু করো। তোমার দেয়া তথ্য র এর কাছে আমরা বিক্রি করব।আর বিনিময়ে আমাদেরকে র যে টাকা দেবে,সেটা আমরা ভাগাভাগি করে নেব।বলো,এবার তুমি আমার সম্মত কি না?”


একথা শোনে গোয়েন্দা বাসক আমতা আমতা করে বলল,“প্রাইভেট গোয়েন্দাগিরির আগের সুদিন এখন নাই।আর আমই নিজেও আছি কিছুটা অভাব অনটনে।আচ্ছা,আমি আপনার সাথে সম্মত‌।এখন থেকে আপনাদের সাথে আমি কাজ করব।”


এবার আরজে চৌধুরী বলল,“তো বিবা রায় আপনাদের সাথে কীভাবে যুক্ত হলো?”


🌟 ছত্রিশ. বিবা রায়ের পরিচয় ✒


আরজে চৌধুরীর কথা শনে বিবা রায় বলতে শুরু করল,“আমি মূলত একজন ট্রাভেলার।তবে আমার ট্রাভেলিংয়ের পরিধিটা অল্প।কলকাতা টু দিঘা। কলকাতা টু ঢাকা।এই হচ্ছে আমার ট্রাভেলিংয়ের পরিধি।তবে সেটা শুধু ট্রাভেলিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না,বরং বাংলাদেশের মানুষকে নতুন করে উপলব্ধি করারও একটা প্রচেষ্টা। এভাবেই চলছিলো আমার দিনকাল।তো হঠাৎ করে মেসো মশাইয়ের সাথে আমার দেখা হয় হাবরাতে।যদিও হাবরা আর হাওড়া শোনতে একই রকম, কিন্তু এ দুই স্থানের মধ্যে দূরত্ব কম না।তো মেসো মশাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো অনেক বছর পর।আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ছিলাম,তখন মেসো মশাইয়ের সাথে আমার সর্বশেষ দেখা হয়েছিলো।তো হাবরাতে আমাকে দেখে মেসো মশাই বললেন,‘তোমাকে আমার চেনা চেনা লাগছে, বিশেষ করে তোমার চেহারার গড়নটা আমার খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে। অর্থাৎ, তোমার চেহারার মতোই আরেক চেহারার ব্যক্তিকে আমি যেন কোথায় দেখেছি।’ এরপর আমাকে মেসো মশাই আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। আমার বাবা_মায়ের পরিচয় জানার পর মেসো মশাই বললেন,‘তোমার চেহারাটা একেবারে তোমার মায়ের মতোই।তাই বললাম,তোমার চেহারার গড়নটা খুবই পরিচিত লাগছে।’ এরপর থেকেই মেসো মশাইয়ের সাথে আমাদের পরিবারের পুরাতন সম্পর্ক আরো দৃঢ় হতে থাকলো।বেশ কয়েকমাস পর আমাকে মেসো মশাই তিনির মিশন আমাকে বললেন।প্রথমে আমি তো বিশ্বাসই করতে পারিনি। কিন্তু যখন বুঝলাম,বিষয়টা বাস্তব,তখন থ্রিল আর এ্যাডভেঞ্চারে আমার দেহমন প্রায় কেঁপেই উঠলো। তাছাড়া নিজের দেশ ভারতের সেবা করার এক সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করলাম।এভাবেই আমি আমার মেসো মশাই ও র এর বি টিমের সাথে যুক্ত হলাম।’


🌟 সাইত্রিশ. ভঞ্জনবাবুর মারাত্মক চাল ✒


ভঞ্জনবাবু বললেন,“হ্যাঁ,কালাউদ্দিন সাহেবকে আপনার সাথে দিয়ে দেব। কিন্তু আমারও একটা বিষয় আপনাকে মানতে হবে।কালাউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে অবস্থান করে আমাদের পরিচয় আপনি প্রকাশ করতে পারবেন না। আমাদের মিশন সম্পর্কে আপনি কোন কিছুই কেউকে বলতে পারবেন না।যদি আপনি এরকম করেন,তাহলে আপনার বিরাট বড় ক্ষতি হবে।”


আরজে চৌধুরী একটু হেসে বলল,“সেটা আমি খুব ভালোভাবেই জানি।আর সেটা আমি খুব ভালো ভাবেই জানি বলেই ছোটবেলায় র এর এজেন্টের সাথে দেখা হওয়ার পরও আমি সেটা কেউকেই বলিনি। বাংলাদেশের একজন নাগরিক র এর বিরুদ্ধে লেগে যে টিকতে পারবে না,সেটাও আমি খুব ভালোভাবেই বুঝি‌। আপনারা র আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সমন্বয় করেন,এটাও আমার প্রকাশ করার দরকার নাই। আঞ্চলিক কারণে আসাম ও মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী এলাকা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ।তাই ময়মনসিংহ অঞ্চলে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বিশেষ করে উলফার খুবই আনাগোনা।এই কারণেই ছোটবেলায় উলফার সদস্যের সাথে আমার সাক্ষাৎ হওয়া সত্ত্বেও আমি উলফার সহযোগী হইনি। কেননা আমি সেটা ভালোভাবেই বুঝি যে, উলফার সাথে জড়িত হলে ভারত সরকারের শত্রু হতে হবে।তাই বাংলাদেশে উলফার অপতৎপরতা অথবা র এর তৎপরতায় আমার কোন সহযোগিতাও নাই_কোন বিরোধিতাও নাই।”


ভঞ্জনবাবু বললেন,“আপনার সহযোগিতা অথবা বিরোধিতায় আমাদের কিছু আসে অথবা যায় না।আপনি তো আপনি, বাংলাদেশে কারোর সাধ্য নাই র এর বিরুদ্ধে লেগে টিকে থাকার।তবে আপনি রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি খুব ভালো বুঝেন। আপনার উচিৎ রাজনীতি করার। রাজনীতি করতে করতে দেখবেন আপনিও একদিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারবেন।তখন আমরাই আপনাকে ভারতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করে নেব।”


একথা শোনে আরজে চৌধুরী হোঃ হোঃ করে হেসে বলল,“কালাউদ্দিন সাহেবকে ভারতে এনেছেন তিনিদের দলকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বলে।আর এখন আমাকে মন্ত্রী হওয়ার কথা বলে কী করাতে চাচ্ছেন?”


ভঞ্জনবাবুও হেসে বললেন,“আপনার মধ্যে রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ভালো জ্ঞানবুদ্ধির পরিচয় পেয়েছি।তাই আপনাকে আমি মন্ত্রী হতে বলেছি।এর বেশি কিছু না।আপনি কীভাবে মন্ত্রী হবেন অথবা না হবেন,সেটা একান্তই আপনার নিজের ব্যাপার।”


আরজে চৌধুরী বলল,“থাক সে কথা।আমি টাকার মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভারতে এসেছি কালাউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।এটাই আমার বর্তমানের মূল কাজ।মন্ত্রী হওয়া অথবা না হওয়া ভবিষ্যতের অনিশ্চিত ব্যাপার।”


ভঞ্জনবাবু মনে মনে বললেন,“র এর ভয় দেখিয়ে আর মন্ত্রী হওয়ার লোভ দেখিয়েও পারলাম না ছেলেটাকে বিরত রাখতে।কালাউদ্দিনকে এনে আমাদের কোন লাভই হয়নি।তাহলে কালাউদ্দিনকে আরজে চৌধুরীর সাথে দিয়েই দেই।”


আরজে চৌধুরীকে ভঞ্জনবাবু বললেন,“কালাউদ্দিন সাহেবকে আমরা হাওড়ার একটা নির্জন বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছি।আমরা আপনার সাথে যাচ্ছি না।আপনিই কালাউদ্দিন সাহেবকে সেই স্থান থেকে নিয়ে যেতে পারবেন।সেই স্থানে যারা কালাউদ্দিন সাহেবকে দেখাশোনা করছে,তাদেরকে আমি ফোন করে আমাদের নিজস্ব সংকেতের মাধ্যমে বলে দিচ্ছি,কালাউদ্দিন সাহেবকে আপনার সাথে দিয়ে দেয়ার জন্য।ওই স্থানের সর্দারের নাম ডাবলু।”


একথা বলে আরজে চৌধুরীকে ভঞ্জনবাবু হাওড়ার সেই বাড়িটার ঠিকানা দিলেন এবং সাংকেতিকভাবে ডাবলুকে নির্দেশ দিলেন।



🌟 আটত্রিশ. হাওড়ার নির্জন বাড়িতে ✒


আরজে চৌধুরী হাওড়ার সেই নির্জন বাড়ির গেইটে গিয়ে কলিং বেল চাপল।ভেতর থেকে ডাবলু বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,“আপনি কে?”


আরজে চৌধুরী বলল,“হ্যাঁ,আমিই আরজে চৌধুরী।”


ডাবলু বলল,“ভেতরে আসুন।”


আরজে চৌধুরী ভেতরে গিয়ে দেখলো,কালাউদ্দিন সাহেব চেয়ারে বসে উদাসীভাবে তাকিয়ে আছেন।আরজে চৌধুরী আসার কারণে তিনির মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়াই নাই।কালাউদ্দিন সাহেবকে আরজে চৌধুরী বলল,“স্যার,আপনাকে আমি নিতে এসেছি। আপনার স্ত্রী মৈতালী খান হায়ার করেছেন আপনাকে খুঁজে বের করার জন্য।সেই সূত্রেই আমি ভারতে এসেছি আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”


একথা শোনে কালাউদ্দিন সাহেব বিরবির করে বলতে লাগলেন,“মৈতালী খান, বাংলাদেশ ...আমি তো কিছুই মনে করতে পারছি না।”


একথা শোনে ডাবলু বলল,“কালাউদ্দিন সাহেব এখন কিছুই মনে করতে পারবেন না। কেননা,তিনিকে আমরা একধরনের বিশেষ ইঞ্জেকশন দিয়েছি এবং মাথার মধ্যে কারেন্টের শক দিয়েছি।যার কারণে তিনি আগামী কয়েকদিন কিছুই স্মরণ করতে পারবেন না।এই নিন তিনির পাসপোর্ট।”


কালাউদ্দিন সাহেবের পাসপোর্টটা আরজে চৌধুরীকে দিয়ে আরেকজনকে ডাবলু বলল,“লাবু, তুমি এখন আরজে চৌধুরীকেও বেঁধে ফেলো।কালাউদ্দিনের মতো আরজে চৌধুরীকেও আমরা ইঞ্জেকশন দিয়ে যশোরের বেনাপোলের পাশের এলাকা হাবরাতে রেখে আসব।তখন ওরা কিছুই বলতে পারবে না।আর যেহেতু ওরা নিয়ম মেনেই ভারতে এসেছে,তাই ওদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমাকে এরকম করার দরকার নাই।আপনাদের ব্যাপারে আমি কিছুই প্রকাশ করব না।”


ডাবলু বলল,“আপনি যে আমাদের ব্যাপারে কিছুই প্রকাশ করবেন না,এটার নিশ্চয়তা কী?”


আরজে চৌধুরী তখন গ্লক নাইনটিন পিস্তলটা বের করে ডাবলুর বুকে ঠেকিয়ে বলল,“নিশ্চয়তা হচ্ছে এটা।”


পিস্তল দেখে ডাবলু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল,“এতো শর্টকাট অথচ কার্যকর নিশ্চয়তা আমার জীবনে দেখিনি।আমাদেরকে আপনি মারবেন না।আপনার সাথে কালাউদ্দিন সাহেবকে আমরা দিয়ে দিচ্ছি।”


এমন সময় বাইরে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেলো।দেয়ালে গুলি লাগার আওয়াজও শোনা গেলো।


বাইরে থেকে একজন বলল,“আমরা ছত্তিশগড়ের বিপ্লবী।আমাদের কথামতো দরজা খুলে দাও।তা না হলে,আমরা বোমা মেরে তোমাদেরকেসহ এই বাড়িটা উড়িয়ে দেব।”


ডাবলুকে আরজে চৌধুরী বলল,“দরজা খুলে দেন।ওরা ভেতরে আসুক।”


আরজে চৌধুরীর কথামতো ডাবলু দরজা খুলে দিলো।আর অমনি চারজন লোক হুড়মুড় করে রুমের ভেতর প্রবেশ করলো।


ওদের প্রত্যেকের হাতে পুরাতন স্টেনগান। কিন্তু পালিশ করার কারণে চকচক করছে।


একজন এসে আরজে চৌধুরীর হাত থেকে পিস্তলটা নিয়ে বলল,“আমরাই হচ্ছি আসল লোক।ভঞ্জনবাবুকে আমরাই র এর সাথে যুক্ত করেছি।মূলত ভঞ্জনবাবুকে আমরাই নিয়ন্ত্রণ করি। কিন্তু এখনের পরিস্থিতি অন্য রকম। তাই আমরাই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করব।তুমি তো আরজে চৌধুরী। তোমার ব্যাপারে আমাদেরকে ভঞ্জনবাবু সকল কিছু বলে দিয়েছেন।”


একথা বলে লোকটা আরেকজনকে বলল,“আরজে চৌধুরীকে তোমরা বেঁধে ফেলো।তাকে আমরা ইঞ্জেকশন দেব আর কারেন্টের শক দেব‌।”


একথা শোনার পর আরেকজন এগুতে লাগলো আরজে চৌধুরীকে দড়ি দিয়ে বাঁধার জন্য।


এমন সময় আরজে চৌধুরী আচমকা প্যান্টের ভেতর থেকে বেরেটা ন্যানো পিস্তলটা বের করে চারজনকেই উদ্দেশ করে গুলি করলো।ছয়টা বুলেট গিয়ে লাগলো কারোর কব্জিতে, কারোর বাহুতে আর কারোর কনুইয়ে।স্টেনগান ফেলে ওরা,‘ও মাগো... ও বাবাগো...’ বলে চিৎকার করতে লাগলো।


এবার আরজে চৌধুরী বলল,“ডাবলু বাবু,আপনি আর লাবু ওদেরকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলুন।তবে আমরা যাওয়ার পর ওদেরকে আপনারা পুলিশে দেবেন,না কি হত্যা করবেন,সেটা আপনাদের একান্তই নিজেদের ব্যাপার।”


একথা বলে কালাউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে আরজে চৌধুরী ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো।


🌟 ঊনচল্লিশ. মৈতালী খানকে ভিডিও কল ✒


কালাউদ্দিন সাহেবকে সাথে নিয়ে আরজে চৌধুরী সেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একটা গাড়ি ভাড়া করে হাবরার উদ্দেশে রওয়ানা হলো।এরপর হাবরা থেকে বেনাপোল সীমান্ত পেরিয়ে ঢাকাগামী বাসে উঠবে।


গাড়িতে বসেই হোয়াটসঅ্যাপে মৈতালী খানকে আরজে চৌধুরী ভিডিও কল করল।ভিডিও কলে কালাউদ্দিন খানকে মৈতালী খান দেখে অনেক কান্নাকাটি করলেন।তবে সেটা সেটা নিখোঁজ স্বামীকে খোঁজে পেয়ে আনন্দে কাঁদলেন।আরো অনেক কথা বলার পর আরজে চৌধুরী কথা শেষ করে মোবাইল ফোনটা পকেটে রেখে দিলো।


🌟 চল্লিশ. চুপ থাকতে হয় ✒


কালাউদ্দিন সাহেব কোন মতে বললেন,“ভঞ্জনবাবু যে আপনার ব্যাপারে সকল কিছু ছত্তিশগড়ের বিদ্রোহীদেরকে বলে দিয়ে গাদ্দারি করল,এখন ভঞ্জনবাবুকে কিছু করবেন না?”


আরজে চৌধুরী বলল,“না,কিছুই বলব না।”


কালাউদ্দিন সাহেব বললেন,“কেন?”


আরজে চৌধুরী বলল,“ভঞ্জনবাবু হচ্ছেন র আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যকার সমন্বয়ক। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে যেমন তিনির সম্পর্ক আছে,তেমনি র এর সাথেও সম্পর্ক আছে।এরকম মানুষের বিরুদ্ধে লাগতে যাওয়া অনিরাপদ।তাছাড়া  আমি বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে ভঞ্জনবাবুর মতো লোকের বিরুদ্ধে লাগা আমার জন্য একেবারেই বিপজ্জনক। শুধু ভারত কেন? প্রায় প্রতিটা দেশের প্রতিটা সমাজেই এরকম মানুষ আছে,যারা সকল ধরনের মানুষকে উষ্কে দিয়ে ফায়দা লুটে নেয়।এদের বিরুদ্ধে লাগা সত্যিই বিপজ্জনক।বরং ওদের ব্যাপারে চুপ থাকাটাই নিরাপদ।” (সমাপ্ত।) ©️All Right Reserved by Junayed Ashrafur Rahman




24°33'58.6"N 90°41'30




My home Location ✒ https://parg.co/UdXS , But I don't live here. Rented out to other peo




Nandail Municipality, Mymensingh, Banglad




Junayedmn1@gmail




+880161111




My Writings ✒ https://www.blogger.com/profile/11734624718328723




702) My success in writing. (লেখালেখিতে আমার সাফল্য।) – Written by Junayed Ashrafur Rahman ✒ https://literatureforalljunayedmn1.blogspot.com/2023/06/702-my-success-in-writing-written-by.




707)After the fantasy of ministry.(মন্ত্রিত্বের ফ্যান্টাসির পরে।)– Written by Junayed Ashrafur Rahman ✒ https://mytimemyexperiencesjunayedmn1.blogspot.com/2023/06/707after-fantasy-of-ministry-written-by.






636) About the intellectual property of my writing.(আমার লেখার মেধাস্বত্ব সম্পর্কে।)— Written by Junayed Ashrafur Rahman ✒ https://parg.co




637)Win prizes.(পুরস্কার জিতুন।) - Written by Junayed Ashrafur ✒ https://parg.co/




667)Case against AI ChatGPT. (এআই চ্যাট জিপিটির বিরুদ্ধে মামলা।) – Written by Junayed Ashrafur Rahman ✒ https://parg.co/U3oD http://ow.ly/Zawy104








#Intellectualproperty #Literature #Law #Contract #Writing  #Wisdomu7kOUdwF/UdXG htmlhtml069 2262.comesh.ple..4"E

Popular posts from this blog

223)(গল্প-1-15) আসামের জঙ্গলে - 15 (IN THE FOREST OF ASSAM - 15)।-Written by Junayed Ashrafur Rahman ✒

184) (গল্প - 1) আসামের জঙ্গলে (IN THE FOREST OF ASSAM)।-Written by Junayed Ashrafur Rahman

799)(Story_45) Murder in the village. (গ্ৰামে খুন।) _ Written by Junayed Ashrafur Rahman