799)(Story_45) Murder in the village. (গ্ৰামে খুন।) _ Written by Junayed Ashrafur Rahman

799)(Story_45) Murder in the village.(গ্ৰামে খুন।) _ Written by Junayed Ashrafur Rahman https://mywritingsjunayedmn1.blogspot.com/2019/12/about-me-junayed-ashrafur-rahman.html ✒ 

The video of how to translate my writings into your language.(আমার লেখাগুলো যেভাবে আপনার ভাষায় অনুবাদ করে পড়বেন,সেটার ভিডিও।) https://youtu.be/rsfots7Zf4Q?si=nmdFRZ_3kmCBzKne 🌟https://fb.watch/sdg6hGOW4A/?mibextid=Nif5oz

“গ্ৰামে একের পর খুন হলো_আরজে চৌধুরী সেটা উদঘাটন করলো।”

(একটা ছেলেকে কিছু লোক প্ররোচিত করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামালো।এরপর ওর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা দায়ের করা হলো।


তাই ছেলেটাকে পুলিশ গ্ৰেফতার করার জন্য অভিযানে নামলো।


এই কারণে ছেলেটা ফেরারি হয়ে বাড়ি ছেড়ে পালালো।


অন্যদিকে ছেলেটাকে যারা সরকারের বিরুদ্ধে লাগিয়েছিলো,ওরাই ছেলেটার সম্পত্তি ভোগ করতে লাগলো।


একদিন ছেলেটা লুকিয়ে নিজ এলাকায় এসে ওদেরকে খুন করলো।)


🌟 এক. গ্ৰামে খুন হলো চারজন ✒


বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি সময়। পরিবেশের তাপমাত্রা বেশ গরমই ছিলো। রাত তখনো গভীর হয় নি। কিন্তু একটানা দুদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে রিবেশ বেশ ঠান্ডা।


তাই রাতের বেলা বৈশাখ মাসের ঠান্ডা বাতাস বেশ ভালোই লাগছিলো। আকাশে চাঁদ থাকা সত্ত্বেও কালো মেঘে তা ঢেকে আছে।ফলে রাত তেমন গভীর না হওয়া সত্ত্বেও বেশ অন্ধকার পরিবেশ বিরাজ করছিলো।


এমন সময় গ্ৰামে একজন আগন্তুক প্রবেশ করলো। অন্ধকারে তাকে স্পষ্টভাবে চেনা না গেলেও,সে যে এ গ্ৰামের পথঘাট খুব ভালোভাবেই চেনে, সেটা ওর হাঁটাচলা দেখলেই বুঝা সম্ভব।


সে গ্ৰামের নির্দিষ্ট একটা এলাকার দিকে হাঁটতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে সে যখন সেই এলাকার খুবই কাছাকাছি চলে এলো,তখন একজন লোক ওর কাছ থেকেই বলল,“কে তুমি?”


আগন্তুক তখন সেদিকে ফিরলে তাকে দেখে সেই লোক ভুত দেখার মতো চমকে উঠে বলল,“আরে তুমি?তুমি কোত্থেকে এলে?গ্ৰামে আসতে তোমার কোন ভয় করেনি?তুমি কি জান না যে,গ্ৰামের এখন খুবই খারাপ। তাছাড়া র‌্যাব_পুলিশ_সিআইডি ও ডিবির অফিসাররাও গ্ৰামে মাঝে মাঝে আসেন।সেই কারণে গ্ৰামে এখন র‌্যাব_পুলিশ_সিআইডি ও ডিবির সোর্স ও ইনফর্মাররাও সক্রিয় আছে।”


একথা বলার পর আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে লোকটা দেখলো, আগন্তুকের চেহারার মধ্যে কোন রকমের পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ আগন্তুকের চেহারায় কোন রকমের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা অথবা ভয় ফুটে উঠে নি।


এটা দেখে আগন্তুককে লোকটা বলল,“কী ব্যাপার,তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারোনি?বলো,তুমি গ্ৰামে কেন এসেছো?”


একথা শোনার পার আগন্তুক কোমরের পিছনে বেল্টের সাথে আটকানো একটা ধারালো চাকু বের করে সোজা লোকটার বুকে গেঁথে দিয়ে বলল,“এ জন্য এসেছি।” চাকুটা  টান দিয়ে বের করেই আবার বুকের মধ্যে গেঁথে দিলো।এরই মধ্যে লোকটা আহ্ করে আর্তনাদ করে উঠলো_এক সেকেন্ডের কম সময়ের মতো।গ্ৰামের নির্জন পরিবেশে আর্তনাদটা বেশ স্পষ্টই শোনা যেত। কিন্তু গতিশীল বাতাসের কারণে বাঁশবাগান আর বিভিন্ন গাছের পাতা ও ডালপালার আওয়াজে সেই লোকটার আর্তনাদ তেমন কেউই শোনতে পায়নি।আর দু একজন শোনতে পেলেও সেই আর্তনাদের আওয়াজকে শেয়াল অথবা খাটাশের আওয়াজ মনে করে ভুল করলো।তাই সেই আর্তনাদের আওয়াজকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।


সে রাতে সেই আগন্তুক ওই গ্ৰামের একই এলাকার আরো তিনজনকে খুন করলো।


🌟 দুই. গ্ৰামে পুলিশ এলো ✒


পরদিন ওই গ্ৰামে হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো।একরাতে ওই গ্ৰামে চারটা খুন হওয়া খুবই অস্বাভাবিক ব্যাপার। শুধু সেই গ্ৰামই না, বরং বাংলাদেশের যে কোন গ্ৰামের জন্যই সেটা একটা অস্বাভাবিক ঘটনা।


একজনের লাশ পাওয়া গেলো গ্ৰামের ওই এলাকার ঠিক সামনেই। দু'জনের লাশ পাওয়া গেলো ওদের বাড়ির দরজার সামনে।আর চতুর্থ জনের লাশ পাওয়া গেলো বাড়ির উঠানের কোণায় অবস্থিত বাথরুমের কাছে।পাশে পড়ে আছে একটা বদনা।


উল্লিখিত চারজনকেই ধারালো চাকু দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।


থানা থেকে পুলিশ এলো।চারটা লাশকে পোস্টমর্টেম করার জন্য জেলা হসপিটালে প্রেরণ করা হলো। এরই মধ্যে শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি।তাই আতঙ্কিত গ্ৰামবাসী যে যার ঘরে গিয়ে প্রবেশ করলো।


🌟 তিন. আরজে চৌধুরীর মক্কেল ✒


আরজে চৌধুরী বসে আছে নিজের অফিসে।বসে বসে এন্ড্রয়েড মোবাইলে ইউটিউবের খবর দেখছিলো। বাইরে চলছে মাঝারি রকমের বৃষ্টি। একেবারে বেশিও না,কমও না।


এমন সময় আরজে চৌধুরী দেখলো এক লোক ছাতা মাথায় দিয়ে ওর অফিসের সামনে উপস্থিত হলো।


আরজে চৌধুরী মোবাইলটার স্ক্রিন‌ অফ করে টেবিলের উপর রেখে সামনে আগত লোকটাকে দেখতে লাগলো।


লোকটা অফিসে প্রবেশ করে দিজ্ঞেস করলেন,“আপনিই কি আরজে চৌধুরী?”


আরজে চৌধুরী বলল,“জ্বি,আমিই আরজে চৌধুরী।”


লোকটা হাতের ছাতাটা অফিসের এক কোণে রেখে বলল,“বসতে পারি?”


আরজে চৌধুরী বলল,“হ্যাঁ,অবশ্যই।”


লোকটা বসতে বসতে বললেন,“আমার মানসম্মান সকল কিছুই‌ শেষ।”


আরজে চৌধুরী বলল,“কীভাবে এরকম হলো?”


লোকটা বলল,“আমার ইউনিয়নের একটা গ্ৰামে চারটা খুন হওয়ার কারণে সামনের ইলেকশনে আমাকে ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনেক লোক। তাই এখন ওদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার একটাই উপায়,সেটা হচ্ছে খুনিকে যত দ্রুত সম্ভব আটক করা।হ্যাঁ,র‌্যাব_পুলিশ তো তদন্ত করছেই, কিন্তু ওরা যদি খুনিকে গ্ৰেফতার করে,তাহলে তাতে আমার কোন কৃতিত্ব থাকবে না।আমার কৃতিত্ব তখনই থাকবে,যখন কোন প্রাইভেট ডিটেক্টিভের মাধ্যমে আমি তদন্তটা করাব।তাছাড়া ওই চারজনের একজন হচ্ছে আমার শ্যালক রতন রায়।সে খুন হয়েছে আমার বাড়ির উঠানে। ফলে ওই হত্যাকাণ্ড আমার প্রেস্টিজ ও ইগোকে আঘাত করেছে।এতে আমার মানসম্মান চলে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। তাই ওই খুনগুলোর সাথে আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারও জড়িয়েছে।”


আরজে চৌধুরী মুচকি হেসে বলল,“বাহ্,বেশ‌‌ ভালোই বুদ্ধি করেছেন? আচ্ছা,আপনি কি  কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার বীরবাহু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজিত রায়?”


লোকটা বললেন,“হ্যাঁ,আমিই সুজিত রায়।কটিয়াদী উপজেলার বীরবাহু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।তো আপনি সেটা জানলেন কীভাবে?”


আরজে চৌধুরী বলল,“ফেসবুক আর ইউটিউব দেখে।”


লোকটা বলল,“হ্যাঁ, জাতীয় পর্যায়ের কয়েকটা চ্যানেলের খবরে আমার এলাকার সেই খবর প্রচারিত হয়েছে।সেই সূত্রে আমার নাম পরিচয়ও প্রচারিত হয়েছে।তবে হীতে বিপরীতও হয়েছে। মনে করেছিলাম ওই সংবাদ প্রচারের পর আমার জনপ্রিয়তা বাড়বে, কিন্তু এখন ওই খবর প্রচারের পর আমার জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে।তো আপনি কোন চ্যানেলের মাধ্যমে খবরটা জেনেছেন?


আরজে চৌধুরী বলল,“সর্বপ্রথম জেনেছি আপনাদের এলাকারই কিছু ফেসবুকার ও ইউটিবারের আপলোড করা লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে।এরপর জেনেছি টিভি চ্যানেলের ইউটিউব ভার্সনের মাধ্যমে। আচ্ছা,আমার মাধ্যমে তদন্ত করালে বেশ টাকা দিতে হবে।”


সুজিত রায় বললেন,“হ্যাঁ,আমি সেটা জেনেই এসেছি। কলকাতায় ভেলুদা গোয়েন্দাগিরি করে যে টাকা নেন,ওর চেয়ে বেশি টাকা আপনি নেন।তবে এতে আমার কোন আপত্তি নাই।কেননা, আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোট ধরে রাখতে হলে আমাকে এটা করতেই হবে।”


🌟 চার. আরজে চৌধুরীর শর্ত ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।আমি যে প্রাইভেটভাবে তদন্ত শুরু করেছি,সেটা আপনি গোপন রাখবেন।”


সুজিত রায় বললেন,“কিন্তু এতে তো আমার উদ্দেশ্য সফল হবে না। অর্থাৎ,আমার এলাকার ভোটাররা যাতে জানতে পারে যে,আমি আমার এলাকার জনগণের প্রতি খুবই কেয়ারফুল।সে জন্যই তো আপনাকে আমি হায়ার করতে এসেছি।”


আরজে চৌধুরী বলল,“হ্যাঁ, আপনার উদ্দেশ্য ঠিকই থাকবে।আপনি শুধু এটা বলবেন যে, প্রাইভেট ডিটেক্টিভ তদন্ত শুরু করেছেন, কিন্তু তদন্তের স্বার্থে ওর পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।অচিরেই সে ওই খুনিকে আটক করবে।”


একথা শোনে সুজিত রায় বললেন,“আপনার কথা একদম ঠিক।”


একথা বলার পর আরজে চৌধুরীকে সুজিত রায় টাকা দিলো।এরপর ঠিকানা প্রদান করে সুজিত রায় চলে গেলেন।


🌟 পাঁচ. বীরবাহু গ্ৰামে ✒


বীরবাহু গ্ৰামে আরজে চৌধুরী উপস্থিত হলো পরদিন সাড়ে দশটার কিছুক্ষণ পর।


গিয়ে দেখলো,র‌্যাব_পুলিশ আর সিআইডির সোর্সরা যে যার মতো নজরদারি করছে।


আরজে চৌধুরী ওদের কাছে না গিয়ে সরাসরি চলে গেলো যে স্থানগুলোতে চারজনের লাশ ছিলো,সেই স্থানগুলোতে।


সেই স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করার পর সে চলে এলো চারজনের পরিবার, অর্থাৎ বাড়ির লোকজনের কাছে। তাদের সাথে আলাপ করে আরজে চৌধুরী মূল্যবান তথ্য সংগ্ৰহ করলো।


এদের মধ্যে একজন তো সুজিত বাবুর শ্যালক রতন।আরেকজন হচ্ছে সুজিত বাবুর খুড়তুতো (কাকা তো) ভাই রঞ্জিত,আর দু'জন হচ্ছে,সুজিত বাবুদের জমি আইদ্যাদার (যারা বর্গায় জমি চাষ করে)।বর্গাদার দু'জন মুসলমান, একজনের নাম কলিম আরেকজনের নাম জসিম। অর্থাৎ নিহত দু'জন হিন্দু আর দু'জন মুসলমান।


আরজে চৌধুরীকে সুজিত বাবুর স্ত্রী শ্রেয়া রায় বললেন,“আমার ভাইকে যে খুন করেছে,তাকে আপনি অবশ্যই গ্ৰেফতার করবেন।সে যেন এই গ্ৰাম থেকে কোনভাবেই পালাতে না পারে।”


🌟 ছয়. আসামির খোঁজে ✒


সন্ধ্যার ঠিক‌ আগে সুজিত বাবুকে আরজে চৌধুরী বলল,“আসামিকে আজ সন্ধ্যার পরপরই ধরতে হবে।আমি, আপনি আর আপনার দুজন লোক আমার সাথে দেবেন।সেই দুজন লোক যেন ভালো দৌড়াতে পারে। কেননা, আসামিকে ধরতে হলে দৌড়াতে হবে। আমার তো কোন টেনশন নাই।আমি দৌড়িয়ে আসামিকে ধরতে না পারলে তাকে আমি পায়ে গুলি করব।”


সুজিত বাবু বললেন,“দেখুন,আমি একজন জনপ্রতিনিধি।পাবলিসিটির জন্য অনেক কিছুই করি। কিন্তু গুলাগুলির মতো বিপজ্জনক কাজে যেতে আমি অনিচ্ছুক।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আপনাকে আমি গোলাগুলি করতে বলছি না। আমার সাথে লোক দিলেই চলবে।”


সুজিত বাবু বললেন,“আচ্ছা,আপনার সাথে আমি দু'জন লোকও দেব_আমিও যেতে চাই। কিন্তু গোলাগুলির মতো কোন ঘটনা ঘটলে আমি পালিয়ে আসব।”


আরজে চৌধুরী বলল,“আচ্ছা,ঠিক আছে।”


একথা বলার পর আরজে চৌধুরী সন্ধ্যা হওয়ার অপেক্ষায় রইলো।


🌟  সাত. রেলস্টেশনে।


গচিহাটা রেলস্টেশনে আরজে চৌধুরী, সুজিত বাবু আর দু'জন লোক উপস্থিত হলেন।


তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে অন্ধকার স্থানটায় ওরা অপেক্ষা করতে লাগলো।


আরজে চৌধুরীকে সুজিত বাবু বললেন,“আচ্ছা,আমরা কার জন্য অপেক্ষা করছি?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমরা অপেক্ষা করছি খুনির জন্য।”


সুজিত বাবু বললেন,“খুনি কখন আসবে বলে আপনার মনে হয়?”


আরজে চৌধুরী বলল,“ট্রেন যখন আসবে,খুনিও তখন আসবে।”


সুজিত বাবু বললেন,“আপনি কি নিশ্চিত?”


আরজে চৌধুরী বলল,“জ্বি,আমি নিশ্চিত।”


🌟 আট. ঘন্টা বাজলো ✒


গচিহাটা রেলস্টেশনে লোকজন অল্প কিছু আছেন।এই লোকজনের সকলেই ঢাকা যাবেন না। অর্ধেকেরও বেশি লোক ভৈরব পর্যন্ত যাবেন। বাকিদের কেউ নরসিংদী আর অন্যরা ঢাকা পর্যন্ত যাবেন।


এরপর ঘন্টা বাজার আওয়াজ হলো।লাউড স্পিকারে ঘোষণা করা হলো,“ঢাকাগামী ট্রেন কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন ছেড়েছে।অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে গচিহাটা রেলস্টেশনে এসে পৌঁছবে।”


সুজিত বাবুকে আরজে চৌধুরী বলল,“সতর্ক থাকুন।অপরাধী রেলস্টেশনে এসে পড়েছে।”


🌟 নয়. আসামির পিছনে ✒


এরপর যখন ট্রেন এলো,তখন একজনকে দেখিয়ে আরজে চৌধুরী বলল,“একে ধরুন।”


দেখা গেলো,গোঁফ ও দাড়িতে ঢাকা একজনকে টার্গেট করে আরজে চৌধুরী দৌড়াতে লাগলো।আর ততক্ষণে ট্রেনও ছেড়ে দিলো।


লোকটা ট্রেনে উঠার জন্য দৌড়াচ্ছে,আর লোকটাকে ধরার জন্য আরজে চৌধুরীও দৌড়াচ্ছে।


আরজে চৌধুরীকে দৌড়াতে দেখে অন্য দু'জন লোকও সেই লোকটাকে ধরার জন্য দৌড়াচ্ছে।ওরা দু’জন আরজে চৌধুরীকে পাশ কাটিয়ে ওই লোকটাকে ধরার জন্য দৌড়াতে লাগলো।


ওই লোকটা ট্রেনে উঠবে উঠবে এরকম মুহূর্তে দু’জনের একজন লোকটাকে ধরে ফেলল।এরপর শুরু হলো তিনজনের ধস্তাধস্তি।এরই মধ্যে খুনিটা দু’জনকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে উঠে দাঁড়ালো।


🌟 দশ. আসামি আটক ✒


উঠে দাঁড়িয়েই খুনিটা পকেট থেকে একটা চাকু বের করে একজনকে টার্গেট করে ছুঁড়ে মারলো। কিন্তু আরজে চৌধুরী ওর গ্লক নাইনটিন পিস্তলটা বের করে ছুঁড়ে মারা চাকুটায় গুলি করলো।ফলে চাকুটা ছিঁটকে গিয়ে অন্যত্র পতিত হলো।


এবার খুনিটা আরেক পকেট থেকে একটা রিভলবার বের করে আরজে চৌধুরীকে টার্গেট করে গুলি করলো।আরজে চৌধুরীও ওর গ্লক নাইনটিন পিস্তল দিয়ে গুলি করলো।


খুনির গুলি ফস্কে গেলো, কিন্তু আরজে চৌধুরীর গুলিটা গিয়ে লাগলো খুনির রিভলবারে।ফলে চাকুর মতো পিস্তলটাও চিঁটকে গিয়ে পতিত হলো বেশ কিছুটা দূরে।


এই সুযোগে ওই দু’জন আবার খুনিটাকে জাপটে ধরলো।এবং আরজে চৌধুরী গিয়ে খুনির দুহাত পিছমোড়া করে মোটা ক্যাবল টাই দিয়ে বেঁধে ফেললো।


🌟 এগারো. লোকজনের জমায়েত ✒


রিভলবার আর পিস্তলের গুলির আওয়াজে সারা এলাকা প্রায় কেঁপে উঠলো। এমনিতেই একরাতে চারটা খুন হওয়ার কারণে এলাকাটা থমথম করছে।এখন আবার রিভলবার আর পিস্তলের আওয়াজ শোনা গেলো।তাই মানুষের মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক আরো বেড়ে গেলো। কিন্তু সেটা কিছুক্ষণের জন্য। কেননা, অনেক মানুষ আছেন,যিনিরা ভয় আর আতঙ্ক কাটিয়ে রেলস্টেশনর দিকে আসছেন মূল ঘটনা জানার জন্য।দেখতে দেখতে অনেক মানুষের ভিড় লেগে গেলো।


🌟 বারো. খুনির আসল চেহারা ✒


আরজে চৌধুরী খুনির দাঁড়ি_গোঁফ টান দিতেই আসল চেহারা বেরিয়ে এলো।খুনিকে দেখে সুজিত বাবু আঁতকে উঠে বললেন,“আরে,এতো আমার আপন ভাইপো অজিত কুমার!কীরে অজিত,শেষে তুই নিজের গ্ৰামের মানুষ খুন করলি?”


শুধু সুজিত বাবুই না,বরং রেলস্টেশনে উপস্থিত সকল জনতা ব্যাপারটা জেনে হতবাক হয়ে গেলেন।


🌟🌟🌟 অতীতের ঘটনা 🌟🌟🌟


🌟 তেরো. সম্পত্তি আত্মসাতের তাগাদা ✒


রাতের খাবার খাওয়ার জন্য সুজিত বাবু বসে আছেন। সুজিত বাবুর পাতে মাংসের তরকারি দিতে দিতে স্ত্রী শ্রীমতী শ্রেয়া রায় বললেন,“অজিতের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিয়েছো?”


সুজিত বাবু খাইতে খাইতে বললেন,“ব্যবস্থা কী নেব?সে ওর সম্পত্তি চেয়েছে,তাই তাকে ওর সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে হবে‌।”


শ্রেয়া রায় বললেন,“এটা কি মামা বাড়ির আবদার যে,সম্পত্তি চাইলেই দিয়ে দিতে হবে?”


সুজিত বাবু বললেন,“মামা বাড়ির আবদারের চেয়েও বেশি।অজিত আমার বড়দার একমাত্র ছেলে। আমার বাবার সম্পত্তিতে যে রকম আমার অধিকার আছে,তেমনি আমার বড়দার সম্পত্তিতে অজিতেরও ঠিক তেমনি অধিকার আছে।”


শ্রেয়া রায় বললেন,“অধিকার থাকলেও তাকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হবে?”


সুজিত রায় বললেন,“আমি পারব না।”


শ্রেয়া রায় রাগের সাথে বললেন,“পারতে তোমাকে হবেই।”


সুজিত বাবু বললেন,“কেন আমাকে পারতেই হবে?”


শ্রেয়া রায় বললেন,“কেননা,আমাকে বিয়ে দেয়ার সময় আমার বাবা তোমাদের সকল সম্পত্তি দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন। ভাগাভাগি করা সম্পত্তি দেখে বিয়ে দেন নি। এরকম হলে তোমার মতো এরকম ফকিন্নির পোলার সাথে আমাকে আমার বাবা বিয়ে দিতেন না।”


সুজিত বাবু বললেন,“এমনভাবে কথা বলছো,যেন তুমি গাঙ্গাটিয়ার জমিদারের নাতনি।”


শ্রেয়া রায় বললেন,“না,আমি গাঙ্গাটিয়ার জমিদারের নাতনি নই। কিন্তু ওদের চেয়ে কোন অংশে আমি কম নই।তুমি যদি না পারো,তাহলে আমিই ব্যবস্থা করব।”


🌟 চোদ্দ. ভাইবোনের ষড়যন্ত্র ✒


এর পরদিনই শ্রেয়া রায়ের ছোট ভাই রতন রায় এলো।


রতন রায় বলল,“দিদি,তুমি কোন টেনশন করবে না। আমি এমন এক কাজ করব,যার ফলে অজিত নিজেই এই গ্ৰাম তো বটেই,এই দেশ ছেড়ে পালাবে।”


শ্রেয়া রায় বললেন,“তুই যেভাবে বলছিস,বাস্তবে কি সেটা এতোই সোজা?”


অজিত বলল,“দিদি,বাস্তবে খুবই সোজা।এখনের যুগ হচ্ছে, গ্লোবালাইজেশনের যুগ।তাই প্রত্যেক দেশের মানুষের উন্নতির যেমন সুযোগ রয়েছে,তেমনি বিভ্রান্ত হওয়ারও অনেক অপশন রয়েছে। অজিতকে আমি বিভ্রান্ত করেই দেশছাড়া করব।বিশেষ করে রাজনীতির মাধ্যমে আমি অজিতকে বিভ্রান্ত করব।”


শ্রেয়া রায় বললেন,“বুঝলি,হাতের টেক্কা ছাড়তে নাই।আমি দেখলাম,অজিতকে কোন‌ রকমে যদি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারি,তাহলে তোর জামাইবাবু হবে সেই সম্পত্তির মালিক।আর তোর জামাইবাবু মালিক হওয়া মানেই আমি মালিক হওয়া।”


রতন বলল,“দিদি, তোমার তো অনেক বুদ্ধি।”


শ্রেয়া রায় বললেন,“আমি তো তোর একমাত্র বোন,আর তুই আমার একমাত্র ভাই।তো আমি বুঝব না কেন?পরের সম্পত্তি আত্মসাৎ না করে যে, সাধারণত হঠাৎ করে বড়লোক হওয়া যায় না, সেটা আমি খুব ভালোভাবেই বুঝি।তাই তো এই বড় মিশনের দায়িত্ব আমি তোকে দিয়েছি।”


রতন বলল,“দিদি,আমি যদি সফল হতে পারি,তাহলে আমাকে তুমি মোটা অঙ্কের বখশিশ দেবে,সেটা তোমাকে আমি আগে থেকেই বলে রাখলাম।”


শ্রেয়া রায় বললেন,“অবশ্যই বখশিশ পাবি।তুই আমার একমাত্র ভাই,তোকেই তো আমি বখশিশ দেব।”


রতন বলল,“তবে সাথে তোমার খুড়তুতো দেবর রঞ্জিতকে সাথে নিতে হবে।”


শ্রেয়া রায় বললেন,“ঠিকই বলেছিস। আমার অনেক বড় ভক্ত রঞ্জিত।তাকে সাথে নিলে তোর কাজ অনেক সহজ হবে।”


তাই পরদিন রঞ্জিতকে রতন বলল,“দাদা রঞ্জিত, আপনার ভাইপো ছেলে হিসেবে অজিত কেমন?”


রঞ্জিত বলল,“ছেলে হিসেবে খারাপ না। কিন্তু হিসাবি একটু বেশি।”


রতন আগ্ৰহ দেখিয়ে বলল,“কী রকম?”


রঞ্জিত বলল,“ওর জমির সাথে আমার জমি আছে। একবার জমি মাপার সময় আমি বলেছিলাম,মাত্র আধহাত জমি আমকে দিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু সে জমিটা ছাড়েনি। একবার বলেছিলাম,এবারের ফসল আমি বিক্রি করব, কিন্তু সে ওর জমির ফসল আমাকে বিক্রি করতে দেয়নি।”


রতন বলল,“অজিত খুবই অন্যায় করেছে।যেমনই হোক,আপনি ওর কাকা।ওর উচিত ছিলো আপনার দাবিদাওয়া মেনে নেয়া।তো আপনি যদি আমার সাথে একমত হন,তাহলে অজিতকে আমি এই গ্ৰাম ছাড়া তো করবই,এমনকি দেশছাড়া করব।”


রঞ্জিত বলল,“যদি এরকমই হয়,তাহলে আপনার সাথে আমি আছি।”


🌟 পনেরো. অজিতকে বিভ্রান্ত করা ✒


সেদিন বিকেলে অজিতকে রতন বলল,“এভাবে কি দিন চলবে?আরো ক্ষমতাশালী হতে হবে।তা না হলে তোমারই গ্ৰামের ছোট লোকরা তোমাকে লাথি_গুঁতো মারবে।”


রঞ্জিত বলল,“এভাবে আর সহ্য হচ্ছে না।আমাদের ক্ষেতের মজুর কলিম ও জসিম আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলে।এই অপমান এখন সহ্য হয় না।”


অজিত বলল,“মামা (অর্থাৎ কাকী মায়ের ভাই তো মামাই হয়), আমি বিষয়টা বুঝতে পারলাম না।”


রতন বলল,“তুমি বুঝবে কীভাবে?তুমি আছো দিনরাত এই ধান্দাবাজিতে যে,কীভাবে তুমি তোমার কাকাবাবুর কাছ থেকে সম্পত্তি আলাদা করবে,সেই ধান্দায়।হ্যাঁ,সম্পত্তি আলাদা করতে চাওয়াকে আমি খারাপ বলছি না। কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অযোগ্যদের চেয়ে পিছিয়ে থাকাকে খারাপ বলছি।নিজে বড়লোক হওয়া সত্ত্বেও ছোটলোকের লাথি_গুঁতো খাওয়াকে আমি খারাপ বলছি। তোমার পরদাদারা ছিলো এই গ্ৰামের হর্তা কর্তা।ব্রিটিশ আমলে তো ছিলোই,এমনকি পাকিস্তান আমলেও তোমার ঠাকুরদা এই গ্ৰামের হর্তা কর্তা ছিলো।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তোমার ঠাকুরদা ছিলেন এই এলাকার হর্তা কর্তা। কিন্তু তোমার ঠাকুরদার পর তোমার বাবা চোপ করে রইলেন।এখন তুমি এমন পর্যায়ে গিয়েছো যে, ছোটলোকের লাথি_গুঁতো খাওয়ার অবস্থা হয়েছে।”


রঞ্জিত বলল,“সাথে আমাদের মানসম্মানও শেষ।”


এগুলো শোনে অজিত চিন্তায় পতিত হলো। অনেক ভেবেচিন্তে অজিত বলল,“মামা,এর থেকে উত্তরণের উপায় কী?”


রতন বলল,“এর থেকে উত্তরণের একটাই উপায়।সেটা হচ্ছে রাজনীতি করা।”


অজিত প্রায় হতবাক হয়ে বলল,“এর জন্য কি আমাকে রাজনীতি করতে হবে?”


রতন বলল,“অবশ্যই।বোকা ছেলে,কিছুই বুঝো না। রাজনীতি না করলে কি তোমার উত্তরণ ঘটাতে পারবে?লেনিন, মহাত্মা গান্ধি,ব্যারিস্টার জিন্নাহ,শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক যদি রাজনীতি না করতেন,তাহলে আদালতে দু টাকার উকালতি করতে হতো।স্ট্যালিন যদি রাজনীতি না করতেন,তাহলে তিনির বাবার মতো মানুষের জুতো সেলাই করতে হতো।মাও সে তুং যদি‌ রাজনীতি না করতেন,তাহলে তিনিকেও তিনির বাবা ঠাকুরদার মতো কুঁড়ে ঘরে থাকতে হতো আর ক্ষেতে কাজ করতে হতো।তেমনি তুমিও যদি রাজনীতি না করো,তাহলে তোমাকে তোমার এলাকার ছোটলোক_ফকিন্নির পোলাদের লাথি_গুঁতো খেয়ে দিন কাটাতে হবে।”


একথা শোনে অজিতের মাথা ঘুরানোর অবস্থা হলো।ভাবনার অতল গহ্বরে অজিতের হারিয়ে যাওয়ার অবস্থা হলো।এটা দেখে রতন বুঝতে পারলো,কথায় কাজ হওয়া শুরু হয়েছে। অর্থাৎ,অজিত বিভ্রান্ত হওয়া শুরু করেছে।


রঞ্জিত বলল,“কতদিন আমরা এভাবে চলব?আমাদের হারানো দিন ফিরিয়ে আনতে হবে।”


রতন বলল,“ভাগ্নে,তাহলে তুমি বিষয়টা নিয়ে ভাবো।আজ তাহলে আমি উঠি।”


একথা বলে রতন চলে এলো শ্রেয়া রায়ের কাছে।শ্রেয়া রায়কে রতন বলল,“দিদি তুমি তো জানো না যে,লেনিন,মাও সে তুং প্রমুখদের কথা বলে বলে অজিতের মনে আমি বিভ্রান্তি ঢুকিয়ে দিয়েছি।কালকে আবার ওর মনে বিভ্রান্তি ঢোকাব।”


শ্রেয়া রায় তখন খুশি হয়ে বললেন,“এই তো আমার লক্ষ্মী সোনা ভাই রতন।” আর রঞ্জিতকে বললেন,“আর তুমি তো আমার প্রাণপ্রিয় দেবর।”


🌟 ষোল. তুমি জেএমবি করবে ✒


পরদিন রতনকে অজিত বলল,“মামা,আমি  গতরাতে অনেক ভেবেছি।সত্যিই আমাকে আমার অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হলে রাজনীতিই করতে হবে।অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি,আমি আওয়ামী যুবলীগ করব।”


রতন বলল,“আরে না,তুমি যুবলীগ করবে কেন? যুবলীগ করলে তোমার উদ্দেশ্য সফল হবে না।”


অজিত বলল,“তাহলে যুবদল করব।”


রতন বলল,“আরে না,যুবদল করলে তুমি আরো ব্যর্থ হবে।”


অজিত বলল,“তাহলে আমি কোন দল করব?”


রতন বলল,“তুমি জেএমবি করবে।”


রঞ্জিত বলল,“রাইট,এটাই ঠিক সিদ্ধান্ত। বর্তমান সময়ে জেএমবি করলেই আমাদের উত্তরণ ঘটবে।”


🌟 সতেরো. কেন জেএমবি করব? ✒


অজিত এবার চমকে উঠে বলল,“আমি হিন্দু,আর জেএমবি হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে কিছু সংখ্যক উগ্ৰপন্থীর সংগঠন। যুবলীগ অথবা যুবদল না করে, আমি কেন জেএমবি করব?”


রতন এবার বলতে লাগলো,“দেখো, যুবলীগ হচ্ছে আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন। আওয়ামী লীগ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি।আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হওয়ার কারণে যুবলীগ করা সত্ত্বেও তুমি ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না।”


অজিত বলল,“আচ্ছা, যুবলীগের কথা তো শোনলাম,তাহলে আমি যুবদল করব।”


রতন বলল,“তাতেও তোমার উদ্দেশ্য সফল হবে না। কেননা, আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আছে। কিন্তু বিএনপির বদৌলতে যুদ্ধাপরাধীরাও মন্ত্রী হয়েছে।তাই তুমি যদি বিএনপির যুব সংগঠন যুবদলে যুগ দাও,তাহলেও তোমার উদ্দেশ্য সফল হবে না।”


অজিত বলল,“তাহলে আপনি কী বলতে চাচ্ছেন? আমাকে যুবলীগ অথবা যুবদল যে ধরনের সহযোগিতা করতে পারবে না,সেটা জেএমবি কীভাবে করবে?”


একথা শোনার পর রতন মনে মনে বলল,‘এই তো সময় হয়েছে আসল কথা বলার।রাখো বাছাধন, তোমার সম্পত্তি বুঝে নেয়া বের করছি।দেশ ছেড়ে পালানোর রাস্তা খোঁজে পাবে না।’


অজিতকে রতন বলল,“যুবলীগ অথবা যুবদল যে ধরনের সহযোগিতা করতে পারবে না, জেএমবি সেটা অবশ্যই করতে পারবে।তুমি যদি জেএমবিতে যোগ দাও,তাহলে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে জেএমবির অন্যান্য সদস্যরা এসে বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে।এই সহযোগিতা কারা করতে পারবে?তুমি কি ভুলে গিয়েছো যে, দেশজুড়ে জেএমবি বোমা মেরে কীরকম অবস্থা করেছিলো? মূলত এসব কারণেই তোমাকে জেএমবি করতে হবে।”


🌟 আঠারো. বরং নতুন দল গঠন করো ✒


এরকম কথা শোনে অজিত বলল,“মামা, আপনার কথা আমি মেনে নিলাম। কিন্তু আমি তো জেএমবির কোন নেতাকে জানি না।আর যাদেরকে মিডিয়ার মাধ্যমে জানি, ওদের কারো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে,আবার কনেকেই কারাগারে আছে। মূলত গ্ৰেফতার হওয়ার পর ওদেরকে মিডিয়াতে দেখানো হয়েছে।এভাবেই আমি ওদেরকে জানি। এছাড়া ওদেরকে আমি আগে কখনো কোনভাবেই জানতাম না।তাই আমি চাইলেও জেএমবিতে যোগ দিতে পারছি না।”


অজিতের কথা শোনে রতন বলল,“আরে বাহ্,ভাগ্নে অজিত, তোমার তো রাজনৈতিক জ্ঞান ও বিচক্ষণতা একেবারে ফোটে উঠছে।একেই বলে সৎসঙ্গ। রাজনৈতিক কোন জ্ঞান ও বিচক্ষণতা তোমার মধ্যে ছিলো না। অথচ আমার সাথে রাজনৈতিক অল্প আলোচনা করেই তুমি কেমন বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে দিলে।”


অজিত বলল,“অবশ্যই মামা,আপনি যদি এ বিয়টা আমাকে না বলতেন যে,যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অযোগ্যদের চেয়ে পিছিয়ে থাকতে হবে, নিজে বড়লোক হওয়া সত্ত্বেও ছোটলোকের লাথিগুঁতো খাইতে হবে_তাহলে বিষয়টা আমার মাথায় আসতোই না।আর এ থেকে উত্তরণের উপায় রাজনীতি করা,সেটাও কেউই বলতো না।”


রতন বলল,“হ্যাঁ, তোমার সেই উত্তরণটাই আমি ঘটাব।সেই উত্তরণটা হচ্ছে, জেএমবির স্টাইলে তুমি নিজেই একটা দল গঠন করবে।”


অজিত প্রায় চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল,“আমি নিজেই জেএমবির স্টাইলে দল গঠন করব?আমার অস্ত্র নাই,লোক নাই।আমি কীভাবে জেএমবির স্টাইলে দল গঠন করব?”


রতন বলল,“তোমার মূলত আত্মবিশ্বাসের অভাব।তুমি যদি আত্মবিশ্বাসের বলে বলীয়ান হয়ে দল গঠন করতে পারো,তাহলে লোক এমনিতেই পাবে,আর ওই লোকেরাই অস্ত্র সরবরাহ করবে।চট্টগ্ৰামে দশ ট্রাক অস্ত্র যেভাবে এসেছিলো, সেভাবেই তুমি অস্ত্র পাবে।”


অজিত বলল,“ওফ্ মামা, আপনার এতো বুদ্ধি।আপনি যদি রাজনীতি করতেন,তাহলে সৈয়দ আশরাফ অথবা ওসমান ফারুকের চেয়ে অনেক বড় নেতা হতে পারতেন।”


রতন বলল,“তাতে আমার কোন বেদনা ও আফসোস নাই।তুমি যদি জেএমবির স্টাইলে নতুন দল গঠন করতে পারো,তাহলে তাতেই আমি খুশি।”


অজিত বলল,“মামা,তাহলে আমি কীভাবে জেএমবির স্টাইলে নতুন দল গঠন করব?”


রতন বলল,“প্রথমে তুমি বাজার থেকে একটা খাতা,কিছু কাগজ আর দামি কলম কিনে আনবে।এরপর তোমার সংগঠনের নাম লিখবে। সংগঠনের লক্ষ্য লিখবে, বোমা মেরে নিজেদের মতো করে ক্ষমতা দখল করা,আর উদ্দেশ্য লিখবে, বাংলাদেশে ছোটলোকদেরকে কোণঠাসা করে রাখা।”


রঞ্জিত বলল,“এভাবেই ছোট লোকদেরকে কোণঠাসা করে আমরা আমাদের হারানো দিন ফিরিয়ে আনব।”


🌟 ঊনিশ. লোক কোথায় পাবো? ✒


রতনের কথামতো অজিত খাতা,কাগজ ও কলম কিনে আনলো।এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও লিখলো।


এবার রতনকে অজিত জিজ্ঞেস করলো, “মামা,খাতা কলমের কাজ তো করলাম। এখন লোক কোথায় পাবো?”


রতন বলল,“এর জন্য তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। তুমি যে জমিগুলোর উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা চাচ্ছো সেগুলো তো চাষ করে কলিম ও জসিম।ওরাই হবে তোমার প্রাথমিক লোক।ওরাই শুরুতে তোমার কাজ করবে।ওদের মাধ্যমেই তুমি লিফলেট বিতরণ করাবে।ওই লিফলেটগুলো পড়ার পর অনেক মানুষ তোমার দলে যোগ দেবে।আর এদের মধ্য থেকেই কিছু লোক দশ ট্রাক অস্ত্রের মতো বড় বড় চালান তোমাকে এনে দেবে। এরপর একসাথে বোমাও মারবে, গোলাগুলিও করবে।”


অজিত বলল,“এর মানে কি আপনি বলতে চাচ্ছেন যে,এখন আমাকে লিফলেট ছাপাতে হবে?”


রতন বলল,“অবশ্যই।লিফলেট না হলে কি আন্দোলন,বিপ্লব ও ক্ষমতা দখলের কাজ চালানো যায়?”


অজিত বলল,“আচ্ছা বুঝলাম।তো আমি লিফলেট কোথায় ছাপাবো?কে আমাকে লিফলেট ছাপিয়ে দেবে?”


রতন বলল,“আরে ভাগ্নে,সেটা নিয়ে তোমাকে টেনশন করতে হবে না।আমিই তোমাকে ছাপিয়ে এনে দেব।তবে এজন্য আমাকে তুমি একলাখ টাকা দেবে‌।”


অজিত অবাক হয়ে বলল,“একলাখ টাকা!কিছু লিফলেট ছাপাতে একলাখ টাকা দিতে হবে?”


রতন বলল,“এ কারণে তুমি টেনশন করবা না।তুমি যে সম্পত্তি পাবে,সেটার তুলনায় একলাখ টাকা অতিশয় নগন্য। এছাড়া তুমি তো কিশোরগঞ্জ শহরে শেয়ারেও ব্যবসা করো।তাই তোমার কাছে একলাখ টাকা থাকতেই পারে।”


অজিত বলল,“হ্যাঁ,আমার কাছে কয়েক লাখ টাকা এমনিতেই থাকে।সেটা থেকে আপনাকে আমি আগামীকাল একলাখ টাকা দেব।”


পরদিন সত্যি সত্যি রতনকে অজিত একলাখ টাকা দিলো। টাকা পেয়ে রতন বলল,“আমাকে যে তুমি একলাখ টাকা দিয়েছো,সেটা রঞ্জিতকে বলো না।”


টাকা পেয়ে রতন অজ্ঞাত একটা বাজারের অখ্যাত একটা ছাপাখানায় গিয়ে দুই হাজার টাকা দিলো এবং লিফটে কী কী লিখতে হবে সেটাও বলে এলো।


🌟 বিশ. আদরের ছোট ভাই ✒


শ্রেয়া রায়কে অবাক করে সেদিন সন্ধ্যায় রতন নিয়ে এলো তিন কেজি খাসির মাংস আর পাঁচ কেজি বড় বড় ইলিশ মাছ।না এগুলো দেখে শ্রেয়া রায় অবাক হননি।বরং রতন এতগুলো বাজার করে আনার কারণে শ্রেয়া রায় অবাক হয়েছেন।


এর অবশ্য অনেক কারণ আছে,শ্রেয়া রায়ের বিয়ে হওয়ার পর থেকে রতন বাজার সদাই করে কিছুই আনেনি।এমনকি একবার রতনকে শ্রেয়া রায়ের বাবা টাকা দিয়েছিলেন বাজার সদাই করে শ্রেয়া রায়কে দিয়ে আসার জন্ত।সেই টাকাটাও রতন আত্মসাৎ করেছিলো।কোন বাজার সদাই তো করেই নি,বরং তিনদিন তিনরাত শ্রেয়া রায়ের বাড়িতে পেট ভরে খেয়ে খেয়ে আরাম আয়েশ করে গিয়েছিলো।


তো আজ তিন কেজি খাসির মাংস আর পাঁচ কেজি বড় বড় ইলিশ মাছ আনার কারণে শ্রেয়া রায় খুবই অবাক হলেন‌।


তাই রতনকে শ্রেয়া রায় বলল,“কীরে ভাই রতন,তুই খাসির এতো মাংস আর এতো ইলিশ মাছ আনলি।তো তুই কি লটারি জিতেছিস নাকি?”


রতন বলল,“দিদি,শুধু লটারি না,বরং লটারির চেয়ে অনেক বেশি কিছু জিতেছি।”


শ্রেয়া রায় চমকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,“তাই না কি রে?তাহলে লটারির চেয়ে বেশি কিছু কী জিতেছিস?”


একথা শোনার পর রতন ব্যাপারটা বলল,সে কীভাবে অজিতের কাছ থেকে একলাখ টাকা আদায় করে নিয়েছে।


একথা শোনে রতনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শ্রেয়া রায় বললেন,“এই তো আমার আদরের ছোট ভাই। নিজেও ইনকাম করছে, আবার দিদির জন্যও বাজার সদাই করে আনছে। কিন্তু আমি যে কারণে অজিতের পিছনে তোকে লাগিয়েছি,সেটা ভুলে গেলে চলবে না।আর হ্যাঁ,তুই যে অজিতের কাছ থেকে একলাখ টাকা নিয়েছিস,এখন রঞ্জিতকে কত টাকা ভাগ দিবি?”


রতন বলল,“দিদি, সবেমাত্র দ্বিতীয় ধাপ শুরু করেছি।যখন ফাইনাল ধাপ শেষ  করবো,তখন অজিত ওর সকল সম্পত্তি ত্যাগ করে হলেও বাঁচার চেষ্টা করবে।আর রঞ্জিতকে কোন টাকা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। রঞ্জিত জানেই না যে,অজিতের কাছ থেকে আমি একলাখ টাকা নিয়েছি।”


🌟 একুশ. কলিম ও জসিমের সাথে ষড়যন্ত্র ✒


সেদিন সন্ধ্যায় কলিম আর জসিমের সাথে রতন ষড়যন্ত্রে বসলো।


রতন বলল,“তোমরা যে বর্গাদার,সেটা তো তোমরা বুঝো। কিন্তু তোমাদেরকে অজিত মানুষই মনে করে না,সেটা কি তোমরা বুঝো?”


কলিম বলল,“অজিত বাবু তো আমাদের জমির মালিক।সুজিত বাবুর জমিও আমরা করি এবং অজিত বাবুর জমিও আমরা করি।জমির মালিক হিসেবে তিনি আমাদের উপর মাতুব্বরি করতেই পারেন।”


রতন প্রায় ধমকে উঠে বলল,“কীসের অজিত বাবু?বলবে, অজিত।অজিতের নামের শেষে বাবু বলার দরকার নাই।আর অজিত কখনো তোমাদের উপর মাতুব্বরি করতে পারবে না। এটা গণতন্ত্রের যুগ। গণতন্ত্রের যুগে সামন্তবাদের মতো কেউ কারোর উপর মাতুব্বরি করতে পারবে না।”


জসিম বলল,“গণতন্ত্র,সামন্তবাদ এগুলো কী? এগুলো কি খায়,না কি মাথায় তেলের মতো লাগায়?”


রতন প্রায় ভরর্ৎসনা করে বলল,“এই কারণেই তো অজিত তোমাদেরকে এতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে,মানুষই মনে করে না।তোমরা এখনো গণতন্ত্র বুঝো না,সামন্তবাদ বুঝো না।তোমরা যদি তোমাদের অধিকার আদায় করতে চাও,তাহলে অবশ্যই তোমাদেরকে রাজনীতি বুঝতে হবে। রাজনীতি বুঝতে হলে অবশ্যই আমার সাথে তোমাদেরকে যুক্ত থাকতে হবে।শুনো,আমি যে কারণে তোমাদের সাথে দেখা করতে এসেছি।অজিত তোমাদেরকে জমিজমার কাজের বাইরে অন্য কোন কাজের কথা বললে সাথে সাথে আমাকে তোমরা ফোন করে জানিয়ে দেবে।এরপর তোমাদেরকে কী কী করতে হবে,সেটা আমি বলে দেব।এই নাও আমার মোবাইল নাম্বার।”মোবাইল নাম্বার দিয়ে রতন আবার বলল,“তোমরা মনে করবা না যে,আমি শুধু এসেছি আমার দিদি আর জামাই বাবুর খরচায় বসে বসে খাওয়ার জন্য।আমি এসেছি তোমাদের মতো অবুঝ কৃষকদেরকে তোমাদের অধিকার পাইয়ে দেয়ার জন্য।সামন্তবাদের যুগে, এই কিশোরগঞ্জে হয়েছিলো বিদ্রোহ।আর বর্তমানে হবে নব্য সামন্তবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন।”


রঞ্জিত বলল,“আমি যদিও অজিতের কাকা হই,তা সত্ত্বেও আমি তোমাদের সাথে আছি।অজিত আমার ভাইপো হলে কী হবে?সে একটা বেয়াদব _ বেতমিজ।এই বেয়াদব ঘায়েল হলেই ভালো হয়।”


এসব বলে রতন চলে এলো সুজিত বাবুর বাড়িতে আর রঞ্জিত চলে গেলো ওর নিজের বাড়িতে।


🌟 বাইশ. বলির পাঁঠা ✒


পরদিন অজিতকে রতন বলল,“ভাগ্নে,লিফলেট ছাপানোর কাজ প্রায় শেষের পথে।আমি তো আমার কাজ করে দিচ্ছি। কিন্তু তোমার কাজ তোমাকে নিজে করে নিতে হবে। ফুটবল খেলায়  স্ট্রাইকারকে মিডফিল্ডার বল পাস করে দেয়, কিন্তু গোল করতে হয় স্ট্রাইকারকেই। তেমনি আমিও তোমাকে লিফলেট ছাপিয়ে দিচ্ছি, কিন্তু কলিম আর জসিমকে দিয়ে লিফলেট বিতরণের কাজ তোমাকেই করিয়ে নিতে হবে।এটা অবশ্যই মনে রাখবে যে,একজন নেতার প্রধান কাজ হচ্ছে নিজের কর্মীদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়া। পথে নেমে আন্দোলনের নামে হৈ হুল্লোড় করতে পারে রাস্তার পাগলেও_কিন্তু কর্মীদেরকে দিয়ে কাজ করাতে পারে শুধু নেতারাই।”


অজিত কিছুটা চিন্তিতভাবে বলল,“মামা,যদি কলিম আর জসিম ভাই আমার লিফলেট বিতরণ করতে রাজি না হয়,তাহলে কী করব?”


একথা শোনে কিছুটা রাগত স্বরে রতন বলল,“কেন করবে না?ওদেরকে তুমি বলবে,‘যদি আমার জমিন চাস করতে চাস,তাহলে আমার কথামতো লিফলেট বিতরণ করতেই হবে।তা না হলে,তোদেরকে লাথি মেরে আমার জমিন থেকে বের করে দেব‌।আর ওদেরকে এখন কলিম ভাই ও জসিম ভাই বলে সম্বোধন করবে না। সম্বোধন করবে শুধু কলিম ও জসিম বলে।আর ওদেরকে তুমি করে সম্বোধন করার দরকার নাই,তুই তুই বলে ওদেরকে তুমি সম্বোধন করবে।”


একথা শোনে অজিত বলল,“মামা,ওরা তো আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। ছোটবেলা থেকেই তো আমি ওদেরকে ভাই বলে সম্বোধন করি।”


রতন এবার অজিতকে ভর্ৎসনা করে বলল,“ছোটবেলা থেকেই উচিত ছিলো ওদেরকে তুই তুই বলে সম্বোধন করার।সেটা তুমি করোনি।আর করবে কী করে?তোমার বাবা তো সেই শিক্ষা তোমাকে দিতে পারেনি।আর তোমার বাবাকেই বা দোষ দিই কীভাবে?দেশে গণতন্ত্র আর গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলে বলে ছোটলোকদেরকে লাই (আস্কারা) দিয়ে দিয়ে বড়লোকদের মাথায় তুলে দেয়া হচ্ছে।তাই এখন বড়লোকদেরকে ছোটলোকরা হেয় করে, অপমান করে।এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না,সামন্তবাদের যুগই ভালো ছিলো।যে সময়ে জমির মালিকরা থাকতো স্থানীয় শাসক, আর রাজারা থাকতো কেন্দ্রীয় শাসক। প্রয়োজনে আমরা আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে সামন্তবাদ চালু করবো,আর সেটা না পারলে আমরাই স্থানীয়ভাবে সামন্তবাদের মতো চলবো। অজিত,তুমি আজই কলিম আর জসিমকে আমি তোমাকে যেভাবে বলে দিয়েছি, সেভাবেই বলবে লিফলেট বিতরণ করার জন্য।”


রঞ্জিত বলল,“অজিত,তুমি তো জানো না,কলিম ও জসিম আমার সাথে কেমন খারাপ আচরণ করে।এই রকম আচরণ করার সাহস পায় শুধু তোমার কারণে। তোমার জমি ওরা চাষ করে, অথচ ওদেরকে তুমি লাই (আস্কারা) দিয়ে মাথায় তুলে রাখো।এই কারণেই ওরা সাহস পায় আমাকে হেয় করার। কিন্তু ওদেরকে তুমি ধমকে ধমকে বলবে লিফলেট বিতরণ করার জন্য।”


অজিত বলল,“হ্যাঁ মামা,আজই আমি বলব।”


কিন্তু মনে মনে রতন বলল,‘রাখো বাছাধন,বলি দেয়ার জন্য কড়িকাঠে যেভাবে পাঁঠার গলা আটকানো হয়,ঠিক সেভাবেই তোমাকে আমি রাজনীতির কথা বলে আইন _ আদালতের মধ্যে আটকাচ্ছি।’


🌟 তেইশ. আবারো কলিম ও জসিমের সাথে ষড়যন্ত্র ✒


পরদিন রতনকে অজিত বলল,“মামা, আপনার কথামতো আমি ওদেরকে বলেছি।”


একথা শোনে অজিতকে রতন বলল,“সাবাস ভাগ্নে,তুমিই পারবে দেশে আবার বোমাবাজি করতে।এরপর তো ক্ষমতা দখল তো সময়ের ব্যাপার মাত্র।যদি উদ্দেশ্য হয় ক্ষমতা দখল,সাহস অন্তরে,তুমি পারবেই বোমা মেরে ক্ষমতা দখল করতে।আচ্ছা,এখন তুমি বাড়িতে গিয়ে রিলাক্স করো।কাল সকালেই লিফলেট পাবে।”


একথা শোনে অজিত ওর বাড়িতে চলে এলো।


সেদিন সন্ধ্যায় কলিম আর জসিমের সাথে রতন আবার ষড়যন্ত্রে বসলো।


রতন বলল,“তোমাদেরকে আমি বলেছিলাম, অজিত কী কী বলে?সেটা আমাকে জানানোর জন্য।বলো, ইদানিং তোমাদেরকে সে কী কী বলেছে?”


কলিম আমতা আমতা করে বলল,“আমাদেরকে আগে অজিত ভাই বলে ও তুমি করে সম্বোধন করতো।এখন নাম ধরে ও তুই তুকারি করে সম্বোধন করে।এখন বলছে,আমাদেরকে সে কিছু লিফলেট বিতরণ করার জন্য দেবে।যদি লিফলেট বিতরণ করতে রাজি না হই,তাহলে ওর জমি থেকে আমাদেরকে লাথি মেরে বের করে দেবে।”


একথা শোনে জসিম বলল,“জ্বি রতন মশাই।কলিম যেগুলো বলেছে, সেগুলো সত্যি।”


রঞ্জিত বলল,“আমার দাদা ঠাকুরদরা গ্ৰামের কৃষকদেরকে অত্যন্ত সম্মান করতেন।আর অজিত এখন তোমাদের সাথে এসব শুরু করেছে।সাহস এতো হয়েছে?”


রতন বলল,“কী?কত্তো বড় সাহস?যে কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলার পরিশ্রমের মাধ্যমে অজিতের পেটের ভাতের যোগান হয়,সেই কৃষককেই কি না অজিত এতো অপমান করে?এটা মেনে নেয়া যায় না।এটা গণতন্ত্রের যুগ,সামন্তবাদের যুগ না।সামন্তবাদের যুগে কৃষকদেরকে কৃতদাসের মতো ইউজ করা হতো।এখন গণতন্ত্রের যুগ।একজন ভোটারের একটা মাত্র ভোট দেয়ার সুযোগ আছে। জমির মালিকেরও একটা ভোট,জমির বর্গাদারেরও একটাই ভোট।অতএব তোমাদের এই অপমান তোমরা মেনে নেবে না।এর বিহিত করতেই হবে।আচ্ছা, লিফলেট না কীসের কথা জানি বললে?”


জসিম বলল,“আমাদেরকে অজিত বলেছে,সে কিছু লিফলেট আমাদেরকে দেবে।আমরা সেগুলো কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানা,স্ট্যাডিয়াম এলাকা,গাইটাল প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আমাদেরকে বিতরণ করতে হবে।”


রতন বলল,“আচ্ছা,লিফলেটের বিষয়বস্তু কী?”


কলিম বলল,“লিফলেটের বিষয়বস্তু আমাদেরকে অজিত বলেনি।”


রতন বলল,“আচ্ছা,কোন সমস্যা নাই।রতন যখন লিফলেট তোমাদেরকে দেবে,তখন আমাকে দেখাবে।আমি দেখব লিফলেটের বিষয়বস্তু। কিন্তু সাবধান,আমি যে তোমাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি,সেটা কখনো অজিতকে বলবে না।যদি বলো,তাহলে আমি পরবর্তীতে কখনো তোমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবো না, তোমাদের অধিকারের কথাও বলব না।”


রঞ্জিত বলল,“আমার কথাও কিন্তু বলবে না।”


🌟 চব্বিশ. লিফলেটের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা ✒


পরদিন সকালে অজিতকে রতন অনেকগুলো লিফলেট দিলো।লিফলেট পড়ার পর রতনকে অজিত বলল,“মামা, লিফলেটে যেগুলো লেখা আছে, সেগুলোর সকল লেখা তো আমার না।যেমন :- বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যে ধরনের কঠোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো তো আমার লেখা না। তাছাড়া লিফলেটের শেষে আমার নাম, ঠিকানা এমনকি মোবাইল নাম্বার পর্যন্ত দেয়া আছে।”


রতন মুচকি হেসে বলল,“আরে ভাগ্নে,এখনের যুগ হচ্ছে ইন্টারনেটের যুগ।বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমান যখন বোমা মেরেছিলো,তখন বাংলাদেশে ফেসবুক, ইউটিউব ছিলো না।ফিচার মোবাইল ছিলো,স্মার্টফোন ছিলো না। কিন্তু এখন আছে।তুমি যদি বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করো, তাহলে বহির্বিশ্বের ক্ষমতাবান দেশগুলো সেটা সহজেই জানতে পারবে এবং তোমাকে সমর্থন করবে। তোমার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দেয়ার কারণ হলো,তোমার মোবাইল নাম্বারের মাধ্যমে ফেসবুকে সার্চ করা হলে তোমার প্রোফাইল পাবে সকলেই।আর ফেসবুকে আপলোড করা তোমার ছবি,ভিডিও এবং পরিচিতি দেখে সকলেই প্রভাবিত হবে।এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কটিয়াদী থানায় ফোন করে তোমার বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।তখন যখন জানানো হবে যে,তোমাদের অনেক সম্পত্তি আছে, এলাকায় তোমাদের অনেক প্রভাব প্রতিপত্তি আছে,তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তোমার সাথে একটা বৈঠকের আয়োজন করা হবে।তখন তোমাদের বৈঠকের ভিডিও দেশে বিদেশের টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে।তখন তোমাকে পায় কে?তুমিই হবে তখন কটিয়াদীর বস। এমনকি পরবর্তীতে তুমি মনোনয়নও পেয়ে যেতে পারো।আর মনোনয়ন পেলেই মন্ত্রী।এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও হতে পারো।অবিশ্বাস হচ্ছে?মন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগছে? কটিয়াদীর পাশের উপজেলা কাপাসিয়ার সোহেল তাজ কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (প্রতিমন্ত্রী) হননি?তিনি হতে পারলে,তুমি না হওয়ার কী কারণ আছে?তুমিও পারবে। শুধু মনে সাহস ও আত্মবিশ্বাস থাকলেই হবে।”


অজিত বলল,“যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকই করতে হয়,তাহলে বোমা মারা কেন?”


রতন বলল,“এখানেই তো আসল ব্যাপার।বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানের মনে বড় আশা ছিলো (ফ্যান্টাসি), ওদেরকে মিডিয়াতে কথা বলতে দেয়া হবে।যেভাবে বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকও আয়োজন করা হবে।ওদের সেই আশা আর পূর্ণ হয়নি। কিন্তু এখন ইন্টারনেটের যুগ।টিভি চ্যানেলের আশায় কেউ বসে থাকে না। নিজের কথা নিজেই ফেসবুক-ইউটিউবে নিজেই প্রকাশ করে।তুমি কি জানো না যে,নান্দাইলের জুনায়েদ আশরাফুর রহমান অনেক বছর যাবৎ ইন্টারনেটে লেখালেখি করছেন।তিনি চাইলেই সেগুলো বই আকারে প্রকাশ করতে পারেন।অথচ ইন্টারনেটে লেখালেখি করার কারণেই তিনির লেখা প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই ইন্টারনেট সংযোগ আছে,এরকম যে কোন স্থান থেকেই পড়া সম্ভব হচ্ছে,সেটা পৃথিবীর যে দেশই হোক না কেন। মূলত জুনায়েদ আশরাফুর রহমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বড় সাহিত্যিকে পরিণত হয়েছেন।একথাগুলো আমার না,বরং জুনায়েদ আশরাফুর রহমান নিজেই নিজের একটা আর্টিকেলে লিখেছেন। তিনি যেমন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বড় সাহিত্যিক হতে পেরেছেন,তেমনি তুমিও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বড় জঙ্গিনেতা হতে পারবে।”


অজিত বলল,“হ্যাঁ,আমিও জুনায়েদ আশরাফুর রহমানের লেখা পড়েছি। কিন্তু তিনি তো বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি অনেক বছর যাবৎ জঙ্গিবাদ,বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রভৃতিকে নিরুৎসাহিত করছেন।তাহলে আমি কেন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলছি?”


রতন বলল,“কোন দার্শনিকের সকল মতামতের সাথে যে একমত হতে হবে,এমন কোন কথা নাই।এমনকি জুনায়েদ আশরাফুর রহমানের একজন ফেভারিট দার্শনিক হচ্ছেন বার্ট্রান্ড রাসেল।অথচ বার্ট্রান্ড রাসেলের সকল মতামতের সাথে জুনায়েদ আশরাফুর রহমান একমত না।যেমন :- ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে বার্ট্রান্ড রাসেল আর জুনায়েদ আশরাফুর রহমানের মতামত একেবারেই ভিন্ন।তেমনি জুনায়েদ আশরাফুর রহমানের লেখা ছোটগল্প,বড় গল্প,শর্ট নভেল, ইতিহাস বিষয়ক আলোচনা প্রভৃতি আমার খুবই ভালো লাগে। কিন্তু জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ সম্পর্কিত নিরুৎসাহ মূলক লেখার সাথে আমি একমত নই। তেমনিভাবে তুমিও এগুলোতে একমত না হয়ে তুমি তোমার মতো জঙ্গিবাদী কাজ চালাতে থাকো।”


একথা শোনার পর আমতা আমতা করে অজিত বলল,“মামা,শেষে কি সফল হতে পারব?”


রতন বলল,“এতো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগলে হবে না। দুনিয়ার বড় বড় বিপ্লব ও রাজনৈতিক ঘটনার সুত্রপাত হয়েছিলো ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেই।তেমনি তোমার সাফল্যও আসবে লিফলেট বিতরণের শুরুর মাধ্যমেই।তাহলে আজ দুপুরের আগেই তুমি লিফলেটগুলো কলিম আর জসিমকে দিয়ে দেবে।”


রঞ্জিত বলল,“আমার ভাইপো হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আমি হব ওর পিএস।”


রতন বলল,“আপনি কাকা হয়ে আপনার ভাইপোর পিএস হবেন?”


অজিতের অগোচরে রঞ্জিত চোখ টিপ মেরে রতনকে বলল,“হওয়া যায়,হওয়া যায়,ভাইপো বড় মানুষে পরিণত হলে ভাইপোরও পিএস হওয়া যায়।”


এরপর যে যার বাড়িতে চলে গেলো।


🌟 পঁচিশ. পুলিশে ধরিয়ে দাও ✒


রতনের কথামতো অজিত দুপুরের খাবারের পর লিফলেটগুলো দিয়ে এলো কলিম আর জসিমকে।


আর সন্ধ্যার পর কলিম আর জসিম লিফলেটগুলো নিয়ে উপস্থিত হলো রতনের কাছে।


রতন লিফলেটগুলো দেখে বলল,“তোমাদের হাতে এগুলো কী?আরে এগুলো তো দেখা যাচ্ছে লিফলেট।এই লিফলেটগুলোই কি অজিত বলেছিলো কিশোরগঞ্জ শহরে বিতরণ করে দেয়ার জন্য?”


জসিম বলল,“জ্বি রতন মশাই,এগুলোই।”


একটা লিফলেট হাতে নিয়ে রতন পড়ার ভান করলো, কেননা সেগুলো তো সে নিজেই ছাপিয়েছে।তাই পড়ার দরকার নাই, শুধু পড়ার ভান করে বলল,“সর্বনাশ!তোমরা জানো, এগুলো কী? তোমাদেরকে ক্রসফায়ারে দেয়ার জন্য এগুলোই যথেষ্ট (বাস্তবে ক্রসফায়ারের জন্য লিফলেট বিতরণ কখনই যথেষ্ট না।এটা এই গল্পে কলিম ও জসিমকে কনফিউজড করার জন্য রতন বলছে)।তোমরা যদি কিশোরগঞ্জ শহরে গিয়ে এগুলো বিতরণ করো,তাহলে তোমাদের পরিণতি হবে বাংলা ভাই,শায়খ আব্দুর রহমান,মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের মতোই।”


একথা শোনে কলিম ভয়ে ভয়ে বলল,“তাহলে আমরা লিফলেটগুলো আগুনে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলি আর অজিতকে গিয়ে বলব যে, কিশোরগঞ্জ শহরে গিয়ে আমরা লিফলেট বিতরণ করে এসেছি।”


একথা শোনে রতন ধমকে উঠে বলল,“কেন পুড়িয়ে ফেলবে? বরং এগুলো নিয়ে উপস্থিত হবে কিশোরগঞ্জ সদর থানায়। সেখানে গিয়ে বলবে, তোমাদের গ্ৰামে এক ভয়ঙ্কর জঙ্গির উত্থান হয়েছে।অজিত হচ্ছে সেই ভয়ঙ্কর জঙ্গি।তোমাদের সারা কটিয়াদীতে কোন জঙ্গি_সন্ত্রাসী নাই। আছে একমাত্র অজিত।একথাগুলো বলে তোমরা প্রমাণ স্বরূপ লিফলেটগুলো পুলিশকে দেবে।আর লিফলেটে অজিতের নাম,ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দেয়ার কারণে পুলিশে অজিতকেই ধরবে। কিন্তু সাবধান,ভুলেও বলবে না যে, অজিতের কথামতো তোমরা শহরে লিফলেট বিতরণ করতে এসেছো।তাহলে অজিতের পাশাপাশি তোমাদেরকেও পুলিশে ধরবে।”


একথা শোনে কলিম ও জসিম হতবাক হলো।এরপর জসিম বলল,“আমরা কেন এরকম করব? অজিতের জমি চাষ করে আমাদের সংসার চলে।আর অজিতকেই আমরা পুলিশে ধরিয়ে দেব? অজিতের সাথে এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা আমরা করতে পারব না।”


রঞ্জিত বলল,“কেন পারবি না? অজিত কী তোদের শালা _ সম্বন্ধী লাগে রে?”


একথা শোনে রতন রেগেই গেলো।এবার আরো জোরে ধমকে উঠে রতন বলল,“এটা তোমাদেরকে করতেই হবে।কেননা,এতে তোমরাও লাভবান হবে।অজিতকে পুলিশে গ্ৰেফতার করবে,না হয় র‌্যাবে ক্রসফায়ারে দেবে। অজিত এখনো বিয়ে করেনি।তাই অজিত মারা গেলে অজিতের সকল সম্পত্তি পাবে আমার জামাইবাবু সুজিত রায়।আর সেই জমিগুলো আমার দিদিকে লিখে দেবেন জামাইবাবু।আর সেই জমিগুলো সারা জীবনের জন্য তোমরা চাষ করতে পারবে নিজেদের মতো করে।”


রঞ্জিত বলল,“তাহলে কি তোমরা সারাজীবন কামলা হয়েই থাকবে? সমাজের নেতৃত্ব‌ কি তোমরা নেবে না?”


একথা শোনে কলিম বলল,“তা সত্ত্বেও অজিতের সাথে আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না।”


🌟 ছাব্বিশ. সুজিত রায়ের বাড়িতে ✒


একথা শোনে রতন বুঝলো,এখন আরেকটা বদমাইশি করতে হবে।তাই সে ওদের সামনেই শ্রেয়া রায়কে ফোন করলো,“দিদি,আজ রাতে আমরা চারজন খাবো। আমাদের মধ্যে একজন তোমাদেরই লোক,আর আমার দু'জন স্পেশাল গেস্ট আছে।পোলাও,খাসির মাংসের রোস্ট,মুরগির কোর্মা,ইলিশ মাছের ফ্রাই ও অন্যান্য আইটেম রান্না করে রাখো।আমরা রাত দশটার আগেই খাইতে আসব। আমার দু'জন গেস্টকে তুমি কাছে দাঁড়িয়ে থেকে পাতে খাবার তুলে দেবে।” কথা বলার ধরন শোনে শ্রেয়া রায় বুঝলো,নিশ্চয়ই বড় ধরনের কোন ব্যাপার।তাই দেরি না করে শ্রেয়া রায় ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে রান্না শুরু করে দিলেন।


এদিকে রতনের কথা শোনে কলিম আর জসিমের আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা হলো। এতো দিন দূর থেকে  অপরূপ শ্রেয়া রায়কে দেখেছে।কোনদিন কথা বলার সুযোগ ওদের হয়নি।তিনিই আজ রাতে ওদেরকে কাছে দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়াবেন ! কোনদিন সুজিত রায়ের বাড়িতে ঢোকার সাহস ও সুযোগ ওদের হয়নি।আজ সেই সুজিত বাবুর ডাইনিং রুমে গিয়ে ওরা খাবে ! এটা যে একেবারে স্বপ্নের মতো লাগছে।


রতন বলল,“তোমরা তো অজিতের জমি চাষ করো,তো অজিত কতদিন তোমাদেরকে ওর বাড়িতে নিয়ে খাইয়েছে?”


কলিম ও জসিম একসাথে বলল,“একদিনও না।”


রতন বলল,“আজ রাতে জামাইবাবুর বাড়িতে গেলেই বুঝবে আদর_আপ্যায়ন কাকে বলে? আমার দিদির আদর_আপ্যায়ন পেয়ে তোমরা ধন্য ধন্য করবে।যদি আমার কথামতো কাজ করো,তাহলে তোমাদের জন্য এরকম আদর_আপ্যায়নের ব্যবস্থা নিয়মিত করা হবে।”


🌟 সাতাশ. সুজিত বাবুর বাড়িতে ✒


তখন রাত পৌনে দশটা।সুজিত বাবুর বাড়িতে রান্নাবান্না হয়েছে। কিন্তু সুজিত বাবু আর শ্রেয়া রায় কয়েকটা বিষয় সম্পর্কে বেশ চিন্তিতই আছেন।


বিশেষ অতিথি কারা?কোথায় তিনিদের বাড়ি?ওরা কী করেন?কোথায় থাকেন? রতনের সাথে তিনিদের পরিচয় কীভাবে?সুজিত বাবুর বাড়িতে ওদের কী কাজ? এসকল চিন্তা তিনিদের মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে।


রাত দশটার কিছুক্ষণ আগে রতন উপস্থিত হলো সুজিত বাবুর গেইটে,সাথে কলিম,জসিম আর রঞ্জিত। গেইটের কলিংবেলের সুইচ চাপা হলো আর বাড়ির ভেতরে আওয়াজ শোনা গেলো।


চিন্তিত সুজিত বাবু আর শ্রেয়া রায় প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে গেইটে এসে খোলে দিলেন। দু'জনেই বিশেষ অতিথিদের দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।যদিও রঞ্জিতকে দেখে তিনিরা রাগলেন না, কিন্তু রতনের সাথে কলিম আর জসিমকে দেখে সুজিত বাবুর মাথায় রাগ উঠলো। সুজিত বাবু কোন মতে নিজেকে সামলে নিলেন।কথায় আছে, অতিথি হচ্ছে নারায়ণের মতো।যখন কোন অতিথি দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়,তখন ধরে নিতে হয়,স্বয়ং নারায়ণ এসে উপস্থিত হয়েছেন।


সুজিত বাবু বললেন,“আরে কলিম _ জসিম তোমরা? আমার বাড়িতে তোমরা এসেছো,এতো অত্যন্ত খুশির ব্যাপার।আসো আসো,বাড়ির ভেতরে আসো।”


রঞ্জিতকে শ্রেয়া রায় বললেন,“আরে ঠাকুর পো,কেমন আছো?আসো,আসো ভেতরে আসো।”


রতন ভেবেছিলো,সুজিত বাবু রাগারাগি করবেন। কিন্তু সুজিত বাবুর এমন আচরণে রতন রীতিমতো হতবাক হলো।


তাই আনন্দিত হয়ে ওদেরকে সাথে নিয়ে রতন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।


ডাইনিং টেবিলে হরেক রকমের ফল,জুস ও শরবত সাজানো আছে।


রঞ্জিত,কলিম ও জসিমকে সুজিত বাবু বললেন,“তোমরা খাইতে থাকো,আমরা আসছি।”


একথা বলে রতন আর শ্রেয়া রায়কে সাথে নিয়ে সুজিত বাবু বেডরুমে প্রবেশ করলেন।


🌟 আটাশ. কে ছোটলোক? ✒


বেডরুমে নেয়ার পর রতনকে সুজিত বাবু অল্প আওয়াজ করে বললেন,“তুমিও কি দিনদিন ছোটলোক হচ্ছো?ওদেরকে মাত্রাতিরিক্ত সম্মান করার কারণে অজিতকে আমার ভালো লাগে না।ওরা ক্ষেতের কামলা,অথচ ওদেরকে সম্মান করে নিজের দাদা_কাকার মতো। তুমিও কি অজিতের মতো ছোটলোকে পরিণত হচ্ছো?জীবনে ওরা আমার বাড়ির সীমানায় প্রবেশের সাহস পায়নি।আর ওদেরকে তুমি আমার ডাইনিং রুমে নিয়ে এসেছো?তা আবার বিশেষ অতিথির মিথ্যা কথা বলে। ”


রতন প্রায় ফিসফিস করে বলল,“জামাই বাবু,আপনি এতো রেগেছেন কেন? ওদের দ্বারাই অজিতকে আমি ঘায়েল করব।”


সুজিত বাবু বললেন,“তুমি কী বুঝাতে চাইছো?”


রতন অতি সংক্ষিপ্তভাবে বলল,“অজিতকে ওদের দ্বারাই আমি গ্ৰাম ছাড়া করব।দেখবেন,এই গ্ৰাম ছেড়ে অজিত তো পালাবেই,এমনকি দেশ ছেড়ে পালানোর পথ পাবে না।বাচ্চু রাজাকার তো বাংলাদেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ পেয়েছিলো, কিন্তু অজিত সেই সুযোগটাও পাবে না।”


সুজিত বাবু বললেন,“এই তোমার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র? আমারই কাছে আমার ভাইপোকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্র বর্ণনা করছো?যে লোকদেরকে আমি পাত্তা দিইনি কখনো,ওদেরকেই আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছো?নিজের দিদিকে ওদের আদর আপ্যায়নের জন্য নিয়োজিত করেছো? ছিঃ,লজ্জা করে না তোমার?”


একথা শোনে রতন মুচকি হেসে বলল,“জামাইবাবু,আগের দিনের জমিদারদের যখন জমিদারি চলে যাওয়ার উপক্রম হতো,তখন ওরাও তো নিজেদের স্ত্রী,দিদি ও বৌদিদেরকে দিয়ে বড় জমিদার অথবা ইংরেজ শাসকদের প্রতিনিধিদের আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতেন।আমি এখন সেই টেকনিকটাকেই আমার মতো করে এখন প্রয়োগ করছি।আর রঞ্জিত তো আপনার নির্বাচনের একনিষ্ঠ কর্মী।”


সুজিত বাবু বললেন,“আমি তো রঞ্জিতের‌ ব্যাপারে কিছুই বলছি না।”


একথা শোনে সুজিত বাবুকে শ্রেয়া রায় বললেন,“দেখেছো, আমার ভাইয়ের কতো বুদ্ধি! তুমি আমার স্বামী হয়েও যে কাজ করতে পারলে না,সেটা আমার ভাই রতন কীভাবে অত্যন্ত কৌশলের মাধ্যমে করে ফেলছে।”


একথা শোনে সুজিত বাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,“আমার ভাইপো অজিত।তাই তাকে আমি পারিনি ঘায়েল করতে। কিন্তু তোমার ভাই রতন তো অজিতের কেউ না।তাই অজিতকে রতন ঘায়েল করতে পারছে।”


রতন বলল,“তাই বলছি কী জামাই বাবু,আমাকে আর কখনো ছোটলোক বলবেন না।”


একথা বলে রতন বেডরুম থেকে ডাইনিং রুমে প্রবেশ করলো,পিছনে সুজিত বাবু ও শ্রেয়া রায়ও প্রবেশ করলেন।


🌟 ঊনত্রিশ. শ্রেয়া রায়ের আদর আপ্যায়ন ✒


আজ শ্রেয়া রায় সেজেছেন একেবারে দুর্গাপূজার সাজে।


প্রতি বছর দুর্গাপূজা এলে শ্রেয়া রায় সেরা সাজে নিজেকে সজ্জিত করেন।নিজের সংগ্ৰহের সবচেয়ে দামী আর আকর্ষণীয় অলঙ্কার ও শাড়ি পরিধান করেন।


আজ যদিও দুর্গাপূজার রাত না,তা সত্ত্বেও তিনি আজ সেই সাজে সেজেছেন।ফ্রান্স থেকে আমদানি করা পারফিউম গায়ে স্প্রে করেছেন।এই ঘ্রান থাকবে দীর্ঘক্ষণ।


এতো দিন শ্রেয়া রায়কে ওরা দূর থেকেই দেখতো। দুর্গাপূজার রাতে অপরূপ সাজে সজ্জিত শ্রেয়া রায়কে দেখে প্রআয় হতবাক হয়ে যেতো। একবার দুর্গামূর্তির দিকে তাকাতো, আরেকবার শ্রেয়া রায়ের দিকে তাকাতো।কে যে কী?কার কী পরিচয়?সেটাই ওরা গুলিয়ে ফেলতো।আর দূর থেকে কলিম ও জসিম শ্রেয়া রায়কে দেখতো।


আজ সেই শ্রেয়া রায় পাশে দাঁড়িয়ে আদর আপ্যায়ন করছেন,সেটা যেন ওরা বিশ্বাসই করতে পারছে না।


ততক্ষণে ডাইনিং রুমের এসিটাও চালু করে দেয়া হয়েছে।কবে যে কলিম আর জসিম এসির বাতাস গায়ে লাগিয়েছিলো,এটা ওদের মনেই নাই।


ডাইনিং রুমের এসির বাতাস আর টেবিলভর্তি খাবার,এরই মধ্যে চলছে শ্রেয়া রায়ের আদর আপ্যায়ন।


ফল খাওয়া শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ হলো।এবার মেইন ডিশের পালা, অর্থাৎ পোলাও, খাসির মাংস, ইলিশ মাছের ফ্রাই প্রভৃতি।


প্রথম দশ মিনিট কোন কথা হলো না, শুধু খাওয়া আর খাওয়া।কলিম আর জসিমের প্লেট খালি হয়,আর অমনি শ্রেয়া রায় মাংস দিয়ে প্লেটটা ভরে দেন। একবার কলিমের প্লেট খালি হয়,শ্রেয়া রায় সেটা ভরে দেন‌। আরেকবার জসিমের প্লেট খালি হয়,সেটাও ভরে দেন।


এভাবেই চললো প্রায় দশ পনেরো মিনিটের ননস্টপ আদর আপ্যায়ন।


এরই মধ্যে রঞ্জিতকে শ্রেয়া রায় বললেন,“কলিম ও জসিমকে আমি আদর আপ্যায়ন করছি,সেটা দেখে কি ঠাকুর পো তোমার হিংসা হচ্ছে?হিংসা করবা না।তুমি তো প্রায়ই আসো আর আমার আদর আপ্যায়ন পাও।”


একথা শোনে রঞ্জিত লাজুক হেসে বলল,“আরে না বৌদি।আমি হিংসা করছি না।”


এবার রতন আসল কথা শুরু করলো,“আমরা তোমাদেরকে এতো সম্মান দিলাম।আর তোমরা সেই সম্মানের কোন মূল্য দেবে না? অজিত কি আমার দিদির মতো এতো আদর আপ্যায়ন করবে?সে কীভাবে এতো আদর আপ্যায়ন করবে?সে তো বিয়েই করেনি।যে আদর আপ্যায়ন দিদি অথবা বৌ অথবা উভয়কে দিয়েই করানো হয়,সেটাই হয় নির্ভেজাল আদর আপ্যায়ন। তোমাদের এই শ্রীমতী শ্রেয়া রায় হচ্ছেন আমার দিদি আর তোমাদের অজিত বাবুর বউ।এরকম আদর আপ্যায়ন কে করবে?অথচ তোমরা সত্য কথার সাথে কিছু অতিরিক্ত কথা যোগ করে কিশোরগঞ্জের পুলিশের কাজে অজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে।এটাও পারবে না?”


এসির ডাইনিং রুমে বসে ভালো ভালো খাবার আর শ্রেয়া রায়ের আদর আপ্যায়নে কাবু হয়ে কলিম ও জসিম অলরেডি ততক্ষণে রতনের পক্ষ নিয়ে নিয়েছে।


জসিম খাসির মাংসের একটা হাড্ডি চুষতে চুষতে বলল,“আমরা তো আপনাদের কথামতোই কাজ করতে চাই। কিন্তু অজিত যদি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্ৰহণ করে,তখন আমরা কী করবো?আমরা কি তখন অজিতের কাছ থেকে রেহাই পাবো?”


রতন বলল,“অজিত কী করবে আর না করবে,সেটা আমরা বুঝবো।তোমরা যদি ওর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করো তাহলে তোমাদের জীবনটাই বলে যাইবে।তোমাদেরকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।অজিতের জমিগুলোর মালিক হবেন আমাদের জামাইবাবু।আর তোমরা হবে হর্তাকর্তা।এই সুযোগ তোমাদেরকে অন্য কে দেবে?”


একথা শেষ হতে না হতে শ্রেয়া রায় জায়গা মতো, অর্থাৎ কথার সাথে কথা মিলিয়ে বললেন,“আর আদর আপ্যায়নের জন্য আমি তো আছিই।আমার মতো তোমাদেরকে আদর আপ্যায়ন কে করবে বলো।”


🌟 ত্রিশ. কলিম ও জসিম রাজি হলো ✒


আপনি থেকে তুমি সম্বোধন আর কথা বলার স্টাইল দেখে কলিম ও জসিম একেবারে কাবু হয়ে গেলো।তাই রতনকে কলিম বলল,“রতন মশাই, আমাদেরকে আপনি যে কথা বলতে বলবেন,সে কথাই পুলিশের কাছে আমরা বলব।”


এবার রতন বলল,“পুলিশের কাছে তোমরা বলবে,অজিত এলাকার একটা শীর্ষ সন্ত্রাসী।সে আমাদেরকে দিয়ে জমি চাষ করায়, কিন্তু কোন পারিশ্রমিক স্বরূপ টাকা অথবা ফসলের ভাগ দেয় না। শুধু সেটাই না, আশেপাশের জমির মালিকদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করে। এমনকি কটিয়াদীর যে কোন জমিতে চাষ করার জন্য ট্রাক্টর নামালে অজিতকে চাঁদা দিয়ে নামাতে হয়। ইদানিং নান্দাইলের জুনায়েদ আশরাফুর রহমানের সাথে আঁতাত করে কটিয়াদীতে জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা শুরু করেছে।”


একথা শোনে সুজিত বাবু বললেন,“তুমি কার কথা বলছো? তোমার এই ষড়যন্ত্রে জুনায়েদ আশরাফুর রহমানকে জড়াচ্ছো কেন?”


রতন বলল,“বিষয়টাকে বড় করার জন্য।”


অজিত বাবু বললেন,“জুনায়েদ আশরাফুর রহমান যদি এটা জানতে পারেন,তাহলে তোমার নামে মামলা করবেন।তখন বুঝতে পারবে মজা কাকে বলে?”


রতন বলল,“আচ্ছা,তাহলে উনার কথা বাদ দিলাম।”এরপর কলিম ও জসিমকে বলল,“তোমরা বলবে, অজানা জঙ্গিদের সাথে আঁতাত করে কটিয়াদীতে অপতৎপরতা শুরু করেছে।এখন সারাদেশে বোমাবাজি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে...।”


🌟 একত্রিশ. পুলিশের কাছে অভিযোগ ✒


পরদিন রতনের কথা মতো জসিম ও কলিম কিশোরগঞ্জ সদর থানায় গিয়ে সকল কিছু বলল। অভিযোগ শোনার পর লিফলেটে দেয়া মোবাইল নাম্বারে দারোগা সাহেব ফোন করলেন।


দারোগা বললেন,“আপনি অজিত বাবু?


অজিত বলল,“হ্যাঁ,আমিই অজিত রায়।”


দারোগা বললেন,“আপনি কি সারাদেশে বোমা মেরে ক্ষমতা দখল করার জন্য লিফলেট ছাপিয়েছেন?”


অজিত বলল,“হ্যাঁ,ছাপিয়েছি।তবে বোমাবাজি বন্ধ করবো,যদি আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বসে আলোচনা করার ব্যবস্থা করে দেন এবং পরবর্তী নির্বাচনে যদি আমাকে সরকার দলীয় নির্বাচনে কটিয়াদী থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়।”


দারোগা এবার খাটাশের মতো হুঙ্কার দিয়ে বললেন,“হারামজাদা,তোকে ডিম থেরাপি দেয়ার ব্যবস্থা করছি।তুই এখন কোথায় বল।আমরা আসছি তোকে গ্ৰেফতার করার জন্য।”


🌟 বত্রিশ. অজিত পালালো ✒


একথা শোনে অজিত ভয় পেলো।তাই সে দৌড়ে গেলো রতনের কাছে।রতন তখন সুজিত বাবুর বাড়ির ড্রয়িং রুমেই বসে টিভি দেখছিলো।রতনকে অজিত পুলিশের ধমকির কথা বলল। রতন বলল,“এতে ভয় পাওয়ার কিছুই নাই।তোমার বিষয়ে এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ ব্যক্তিরাও জানতে পারবেন। কিশোরগঞ্জ সদর থানার দারোগা বিষয়টা জানাবেন ওসিকে,ওসি জানাবেন এডিশনাল এসপিকে,এডিশনাল এসপি জানাবেন এডিশনাল ডিআইজিকে, এডিশনাল ডিআইজি জানাবেন ডিআইজিকে,ডিআইজি জানাবেন এআইজিকে,এআইজি জানাবেন আইজিকে আর আইজি জানাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এরপর দেখবে তোমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার পাঠানো হবে।তখন বুঝতে পারবে কষ্ট করলে কীরকম সুফল মেলে।তাই এখন কিছু কষ্ট তো করতেই হবে।আচ্ছা,তুমি বসো,আমি ভেতর থেকে আসছি।”


একথা বলে রতন তাড়াতাড়ি শ্রেয়া রায়ের রুমে গিয়ে বলল,“দিদি,দিদি, আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পড়েছি।এখন তোমার অভিনয় সফল হলেই আমরা সফল হব।”একথা শোনে রতন সকল কিছু বলল এবং অজিতকে কী বলতে হবে সেটাও বলল।


শ্রেয়া রায় বললেন,“সত্যিই কি অজিতকে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে?”


রতন বলল,“আরে না। এধরনের বিষয়ে,অর্থাৎ বোমাবাজি না করেই বোমাবাজির দাবি করা অথবা লিফলেট ছড়ানোর কারণে কেউকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয় না এবং ক্রসফায়ারে দেয়ারও কোন বৈধতা নাই। কিন্তু এই বিষয়টাকেই আমরা বড় করে তুলব। কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিদেরকে অজিতের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে ক্রসফায়ারের ব্যবস্থা করব।”


এরপর ড্রয়িং রুমে শ্রেয়া রায় প্রবেশ করলেন।শ্রেয়া রায়কে দেখে অজিয হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,“কাকীমা,কাকীমা,আমাকে তুমি বাঁচাও।”


শ্রেয়া রায় হতবাক হওয়ার ভান করে বললেন,“হায় রে অজিত,তুই এটা কী করেছিস?তুই তাড়াতাড়ি গ্ৰাম ছেড়ে পালা।তোকে র‌্যাবে পেলে ক্রসফায়ারে দেবে।”


একথা শোনে অজিত তো একেবারেই ভয়ে কাঁপতে থাকলো।


রতন বলল,“তুমি পালাও অজিত।তোমার মা ও তোমার সকল সম্পত্তি আমরা দেখব।এবং সময় মতো প্রতিবছর ফসল বিক্রি করে তোমার বিকাশ অথবা নগদ একাউন্টে পাঠিয়ে দেব।”


শ্রেয়া রায় বললেন,“আর তোর মাকে নিয়ে তুই কোন টেনশন করবি না।তোর মা মানে আমার দিদি।আমার দিদিকে আমি দেখে রাখব।তুই পালা।”একথা শোনার পর কটিয়াদী ছেড়ে অজিত পালিয়ে গেলো।


🌟 তেত্রিশ. অজিতের বাড়িতে পুলিশ এলো ✒


অজিত পালোনোর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পুলিশ এলো।পুলিশ এসে বাড়ি ঘেরাও করলো।দারোগা মাইকে ঘোষণা করলেন,“অজিত বাবু,আপনি তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসুন।”


একথা শোনে অজিতের মা বাড়ি থেকে বের হয়ে বললেন,“আমার ছেলেকে আপনারা এভাবে ডাকাডাকি করছেন কেন?সে কী করেছে?”


ততক্ষণে কলিম ও জসিমও উপস্থিত হয়েছে।একথা শোনে কলিম বলল,“আপনার ছেলে কী করেছে মানে?আপনার ছেলে সম্পর্কে আপনি কী জানেন?আপনার ছেলে একটা সস্ত্রাসী।তাই পুলিশ এসেছে আপনার ছেলেকে গ্ৰেফতার করার জন্য।”


একথা শোনে দারোগাকে অজিতের মা বললেন,“আমার ছেলে কখনো সন্ত্রাসী না।আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার ছেলে অজিত আরো ভদ্র হয়েছে।”


জসিম বলল,“ভদ্র না।একটা হারামজাদা হয়েছে।এখন সারাদেশে সন্ত্রাসী কাজ শুরু করেছে।”


অজিতের মাকে দারোগা বললেন,“আমার কাছে কলিম ও জসিমের কথা সত্য বলেই মনে হচ্ছে। তাছাড়া ফোনে আমার সাথে আপনার ছেলে বিষয়টা স্বীকারও করেছে।”


এরই মাঝে ছুটে এলেন শ্রেয়া রায়।তিনি এসে অজিতের মাকে বললেন,“দিদি,সন্তান যে কখন খারাপ হয়ে যায়, সেটা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না।অজিত যে এরকম করবে সেটা আমিও বুঝতে পারিনি।”


রঞ্জিতও ততক্ষণে এসে পড়েছে, এবার অজিতের মাকে সে বলল,“আপনার ছেলে সন্ত্রাসী।সেটা প্রমাণিত হয়েছে,এখন নিজের ছেলের পক্ষে সাফাই গাওয়া বন্ধ করেন।”


এরপর থেকেই অজিত পলাতক।


🌟🌟🌟 বর্তমানের ঘটনা 🌟🌟🌟


🌟 চৌত্রিশ. অজিতের আত্মপক্ষ সমর্থন ✒


অজিত বলল,“আমাকে তোমরাই এরকম বানিয়েছো। তোমাদের কারণেই আমি এরকম হয়েছি। আমাকে রতন মামা ষড়যন্ত্র করে জঙ্গিবাদের পক্ষে লিফলেট ছাপিয়েছে,আমার ক্ষেতে কাজ করা কলিম ও জসিমকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে, রঞ্জিত কাকাও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। তাই আমি ওদেরকে খুন করেছি।”


একথা শোনে আরজে চৌধুরী বলল,“তাই বলে আপনি ওদেরকে খুন করতে পারেন না। আপনার উচিত ছিলো আইনগতভাবে বিষয়টা সামাল দেয়া।”


🌟 পঁয়ত্রিশ. সুজিত বাবু কৃতিত্ব চান ✒


ততক্ষণে পুলিশও উপস্থিত হয়েছে।আরজে চৌধুরীকে দেখিয়ে সুজিত বাবুকে কটিয়াদী থানার ওসি বললেন,“উনি কে? একজন খুনিকে উনি এভাবে জেরা করছেন কেন?”


সুজিত বাবু সকলের সামনে আরজে চৌধুরীকে না চেনার ভান করে বললেন,“আপনি কে ? কোথা থেকে এসেছেন? আসুন,আসুন।” একথা বলে আরজে চৌধুরীকে সুজিত বাবু ডেকে আড়ালে নিয়ে এলেন। এরপর বললেন,“আপনাকে আমি হায়ার করে এনেছি। আপনি আসামি ধরেছেন।এখন আসামি ধরার কৃতিত্ব আমি নেব।”


🌟 ছত্রিশ. আরজে চৌধুরী যেভাবে আসামি চিনলো ✒


আরজে চৌধুরী বলল,“অবশ্যই।আপনি যদি আমাকে দিয়ে আসামি ধরিয়ে নিজে কৃতিত্ব পেতে চান,তাতে আমার কোন আপত্তি নাই।”


সুজিত বাবু বললেন,“আচ্ছা,আপনি কীভাবে বুঝলেন যে,আমার ভাইপো অজিতই খুনি?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমি আসার পর থেকেই দেখলাম, দাঁড়িগোঁফে মুখ ঢাকা একলোক আমাকে নজরদারি করছে।তাই আমিও ওই লোকটার পিছু নিই।পিছু নিয়ে আড়াল থেকে শোনতে পেলাম মোবাইল ফোনে বলছে,‘গ্ৰামে আমার কাজ শেষ।আমি আজ সন্ধ্যার ট্রেনেই ঢাকা চলে আসছি।’ একথা শোনার পর আমি চলে এলাম আপনার বাড়িতে।এরপর শ্রেয়া ম্যাডামের কাছ থেকে অজিতের ফেসবুক প্রোফাইলের লিংক নিলাম।অজিতের ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকে দেখলাম অনেক দিন যাবৎ কোন স্ট্যাটাস নাই। কিন্তু অনেক ছবি আছে।একটা ছবি নিয়ে তাতে এ্যাপসের  মাধ্যমে দাঁড়িগোঁফ লাগিয়ে দেখলাম,ওই লোকটা মূলত ছদ্মবেশী অজিত।এরপর আমি আপনাদেরকে নিয়ে রেলস্টেশনে ওঁত পেতে রইলাম অজিতকে ধরার জন্য।”


সুজিত বাবু বললেন,“আচ্ছা,ঠিক আছে।আপনি আমার উপকার করেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ।”


আরজে চৌধুরী বলল,“ধন্যবাদের কিছু নাই।আমি টাকার বিনিময়ে আসামি ধরে দিয়েছি,এটা সার্ভিস_উপকার না।”


আরজে চৌধুরী একথা বলার পর কিশোরগঞ্জ শহরগামী একটা অটোরিকশাতে উঠে বসল।


🌟 সাইত্রিশ . খুন হলেন শ্রেয়া রায় ✒


ততক্ষণে শ্রেয়া রায় খবর পেয়ে চলে এলেন গচিহাটা রেলস্টেশনে।


ওদিকে পুলিশও কম যায় না।ক্যাবল টাইটা কেটে অজিতের একহাতে হাতকড়া পরিয়ে অন্য হাতটা নিজের হাত দিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন ওসি সাহেব।আর অন্যপাশে দাঁড়িয়ে রইলেন একজন সিনিয়র দারোগা।দেখে যেন মনে হচ্ছে, খুনি অজিতকে ওরাই ধরেছেন।


এরই মধ্যে অনেক মানুষ জমায়েত হয়েছেন।আবার এদের মধ্য থেকে অনেকেই ফেসবুকে ঘটনাটা লাইভ প্রচার করছে।


সুজিত বাবু চেয়েছিলেন কৃতিত্বটা নিজে নেয়ার জন্য। কিন্তু শ্রেয়া রায় এসেছেন,তাই কৃতিত্বটা প্রিয়তমা স্ত্রী শ্রেয়া রায়কে দিতে চাচ্ছেন।


সুজিত বাবু চেয়ারম্যান সুলভ ভঙ্গিতে বক্তব্য দিতে দিতে বললেন,“আপনারা দেখছেন যে,আমার ভাইপো অজিত খুন করে গ্ৰেফতার হয়েছে। আপনারা দেখছেন, অজিতকে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু মূলত অজিতকে ধরেছি আমি। কেননা,আমি একজন ন্যায়পরায়ন চেয়ারম্যান। আমার কাছে আমার ভাইপোর চেয়ে এলাকার জনগণই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।আর হ্যাঁ,আমার প্রিয়তমা স্ত্রী যদি আমাকে বুদ্ধি ও উপদেশ না দিতেন,তাহলে আমি অজিতকে কখনই ধরতে পারতাম না।আর পুলিশও অজিতকে ধরে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারত না।”


কথাগুলো শোনে উপস্থিত সকলেই খুশি হলেন। কিন্তু শেষের কথাটা শোনার পর পুলিশদের চেহারা মলিন হয়ে গেলো।


শ্রেয়া রায় বললেন,“হ্যাঁ,আমিই তো অজিতকে ধরার বুদ্ধি বাতলে দিয়েছিলাম।অজিত যে চিহ্নিত পলাতক সন্ত্রাসী এটা তো আপনারা সকলেই জানেন।”


সুজিত বাবু বললেন,“বীরবাহু গ্ৰামের লোকজন এতো দিন জানতো শ্রেয়াকে আমি বিয়ে করেছি শ্রেয়ার রূপে মুগ্ধ হয়ে। কিন্তু আজ থেকে ওরা জানবে আমার স্ত্রী প্রিয়তমা শ্রেয়া রায় রূপ ও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে বলিউডের নায়িকাদের চেয়ে বেশি এবং বুদ্ধির দিক দিয়ে ইন্দিরা গান্ধির চেয়ে বেশি।”


একথা শেষ হতে না হতেই অজিত ছোবল মেরে সিনিয়র দারোগার কোমরে আটকানো হোলস্টার থেকে পিস্তলটা নিয়ে বলল,“কাকা, আমার জীবনটাকে তোমার বৌ শ্রেয়া রায় তছনছ করে দিয়েছে।আমি তাকেও ছাড়ব না।”


একথা বলে অজিত গুলি করা শুরু করলো।একটা গুলি লাগলো শ্রেয়া রায়ের পেটে, দু'টো গুলি লাগলো বুকে আর শেষের গুলিটা লাগলো মাথায়।এতো কাছ থেকে মাথায় গুলি লাগার কারণে শ্রেয়া রায় তখনই নিহত হলেন।অজিত এবার সুজিত বাবুকে গুলি করবে এমন সময় একটা গুলি এসে লাগলো অজিতের হাতে।আর তখনই অজিতের হাত থেকে পিস্তলটা দূরে পতিত হলো।আর অজিতও ‘ও বাবা গো’ বলে হাত চেপে মাটিতে বসে পড়লো।


সুজিত বাবু দেখলেন,আরজে চৌধুরী ওর পিস্তল গ্লক নাইনটিন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থাৎ অজিতকে আরজে চৌধুরীই গুলি করেছে।


উপস্থিত জনতা ভয় পেয়ে যে যার মতো পালিয়ে গেলো।


কিন্তু পালালো না আরজে চোধুরী,সুজিত বাবু, পুলিশ আর অজিত।


পুলিশ এবার আহত অজিতকে ও নিহত শ্রেয়া রায়ের লাশ নিয়ে থানার দিকে রওয়ানা হলো।


এরপর আরজে চৌধুরীকে সুজিত বাবু বললেন,“আপনি আবার ফিরে এলেন যে?”


আরজে চৌধুরী বলল,“আমি এসেছি শেষের অবস্থাটা দেখার জন্য।”


সুজিত বাবু বললেন,“আপনি যে বললেন,টাকা ছাড়া আপনি কোন তদন্ত করেন না।”


আরজে চৌধুরী বলল,“তাতো ঠিকই। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত আগ্ৰহ ও কাজের জন্য তো অন্য কারোর কাছ থেকে টাকা নেয়ার দরকার নাই।”


এরপর সুজিত বাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,“আপনাকে বিদায় না করলেই হয়তো ভালো হতো।অজিতকে গুলি করে আমাকে যেভাবে নিরাপদ করেছেন, তেমনি শ্রেয়াকেও হয়তো নিরাপদ করতে পারতেন।”


আরজে চৌধুরী কোন কথা না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অটোরিকশাতে উঠে বসলো।(সমাপ্ত)

Popular posts from this blog

223)(গল্প-1-15) আসামের জঙ্গলে - 15 (IN THE FOREST OF ASSAM - 15)।-Written by Junayed Ashrafur Rahman ✒

184) (গল্প - 1) আসামের জঙ্গলে (IN THE FOREST OF ASSAM)।-Written by Junayed Ashrafur Rahman